
মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে লিভার বা যকৃত অন্যতম। প্রতিদিন দেহে জমে থাকা বিষাক্ত উপাদান ছেঁকে ফেলা থেকে শুরু করে বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ লিভার পালন করে অনেক দায়িত্ব। অথচ আমরা অনেকেই লিভারকে ভালো রাখার ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দিই না। সাম্প্রতিক একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললেই লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন-এর তথ্য অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট খাবার নিয়মিত খেলে লিভার আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে। যেমন, চীনে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত চারবার বাদাম খাওয়ার অভ্যাস নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) এর ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। পূর্ব চীনের আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে, সপ্তাহে দুইবার কাঁচা রসুন খেলে হেপাটাইটিস-বি-তে আক্রান্ত না এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এ ছাড়া নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে লিভার এনজাইমের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা সুস্থ লিভার কার্যকারিতার লক্ষণ।
নিচে দেওয়া হলো বিজ্ঞানভিত্তিক এমন সাতটি খাবার, যেগুলো লিভারকে রাখবে সতেজ, কর্মক্ষম ও সুরক্ষিত।
পালং, কেল ও রকেট লেটুস: সবুজ শাক সবজির জাদু
লিভার পরিষ্কার রাখতে শাকসবজির তুলনা নেই। পালং, কেল বা রকেট লেটুসের মতো গাঢ় সবুজ শাকগুলো শুধু প্লেট রাঙায় না, এগুলোতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান যা লিভারকে বিষমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এগুলো বাইল উৎপাদন বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে। সালাদে, স্মুদি বানিয়ে বা রসুন দিয়ে ভেজে যেভাবেই খান না কেন, শাকসবজি লিভারকে বলবে ধন্যবাদ।
বিটরুট: রঙে যত গুণ
গাঢ় বেগুনি রঙের বিটরুট শুধু চোখে ভালো লাগে না, এতে আছে বেটালেইন নামক উপাদান, যা প্রদাহ কমাতে এবং লিভারের ডিটক্সে সাহায্য করে। এছাড়া রক্ত চলাচল বাড়ায়, ফলে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ে। বিটরুট কাঁচা, সেদ্ধ বা স্মুদিতে ব্যবহার করতে পারেন যেভাবেই খান, উপকার পাবেন।
অ্যাভোকাডো: সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যবান
অ্যাভোকাডো শুধু ক্রিমি ও সুস্বাদু ফলই নয়, এতে রয়েছে উপকারী ফ্যাট, যা লিভারে প্রদাহ কমায় ও কোষ মেরামত করে। অ্যাভোকাডোতে থাকা গ্লুটাথিওন লিভারের ডিটক্সিফিকেশনে বড় ভূমিকা রাখে। সালাদে, স্মুদিতে কিংবা টোস্টে মেখে অ্যাভোকাডো আপনার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করা উচিত।
রসুন: স্বাদ আর স্বাস্থ্য একসঙ্গে
রসুনের গন্ধে ভ্রু কুঁচকালেও, এর গুণ লিভারের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এতে থাকা সালফার যৌগ লিভারের এনজাইম সক্রিয় করে, যা দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে। সেইসঙ্গে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ। ভাজি, তরকারি বা রোস্টে রসুন যোগ করলে বাড়বে স্বাদ ও উপকার দুটোই।
গ্রিন টি: দিনে এক কাপেই মিলবে উপকার
গ্রিন টিতে আছে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় ও চর্বি বিপাকে সাহায্য করে। গবেষণা বলছে, নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমে। দৈনিক এক-দুই কাপ গ্রিন টি হতে পারে আপনার লিভারের প্রাকৃতিক বন্ধু।
হলুদ: প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক
রান্নার পরিচিত উপাদান হলুদে রয়েছে কারকিউমিন, যা লিভার কোষ রক্ষা করে ও বিষাক্ত পদার্থ সরাতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে বাইল নিঃসরণ বাড়িয়ে হজমেও সহায়তা করে। তরকারি, ডাল, এমনকি গরম দুধেও একটু হলুদ মিশিয়ে নিতে পারেন।
আখরোট: ছোট্ট খাবারে বড় উপকার
আখরোটে রয়েছে ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা লিভারে প্রদাহ কমায়। এতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড লিভার কোষ মেরামতেও সহায়ক। হালকা ক্ষুধা মেটাতে এক মুঠো আখরোট খাওয়া, সালাদে ছিটিয়ে দেওয়া কিংবা ওটমিলে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
লিভার সুস্থ রাখার জন্য আলাদা ওষুধ নয়, দরকার সচেতন খাদ্যাভ্যাস। গবেষণায় প্রমাণিত এসব খাবার নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে লিভারের জটিলতা অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই আজ থেকেই নিজের প্লেটে রাখুন লিভারবান্ধব খাবার। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যবান লিভার মানেই কর্মক্ষম ও রোগমুক্ত জীবন।
সূত্র:https://tinyurl.com/yr84bk48
আফরোজা