
বাউফলে গত বছরের ৫ আগষ্টের পর বিভিন্ন অপরাধেমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া ও বহিস্কৃত নেতারা রাজনৈতিক সভা, মিছিল ও মিটিংএ সরব হচ্ছেন। এ নিয়ে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমালোচনা ও বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, বিএনপি দলী সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল আলম তালুকদার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম ফারুক আহম্মেদ তালুকদার গ্রুপ পৃথকভাবে জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তির বিজয় মিছিলের আয়োজন করে।
এছাড়াও জামায়াতপ ইসলামী ও ইসলামি আন্দোলন পৃথকভাবে মিছিলের আয়োজন করে। ইসলামি আন্দোলনের মিছিলের নেতৃত্বে এক আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতি নিয়েও চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল আলম তালুকদারের মিছিলে দেখা গেছে আন্তঃবিভাগীয় সিএনজি চোরচক্রের হোতা মো. সানুকে (৫০)। এর আগে গত শনিবার (২ আগষ্ট) মিছিলে শহিদুল আলম তালুকদারের গাড়ি বহরের ছাদখোলা গাড়িতে সানুকে দেখা গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক চুরি মামলা রয়েছে। একাধিকবার তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। অনৈতিক কার্যকলাপের দায়ে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে সানুকে বহিস্কার করা হয়। এছাড়াও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া মো. জসিম উদ্দিনকেও শহিদুল আলম তালুকদারের সভা ও সমাবেশে বক্তৃতা দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, যুবদল নেতা সানু অব্যাহতিপ্রাপ্ত তা তাঁর জানা ছিল না। আরেক অব্যাহতি পাওয়া যুবদল নেতা জসিম উদ্দিনের বিষয়ে তিনি বলেন, এতো বড় মিছিলে কে আসলো, আর আসলো না তা দেখার সুযোগ থাকে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাউফল উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি একেএম ফারুক তালুকদারের পক্ষে মিছিলে ছিল বাউফল পৌর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া মো. হুমায়ন কবির। তার সঙ্গে দেখা গেছে অনৈতিক কার্যকলাপ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিবের পদ থেকে বহিস্কৃত নেতা মো. অলিয়ার রহমান, নাজিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন খানকে।
এসব বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান ওরফে টোটন বলেন,‘অনৈতিক কার্যকলাপ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিএনপির দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ও বহিস্কৃত হওয়া কারো পক্ষে বিএনপির মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কেউ যদি তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অপরদিকে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ইসলামি আন্দোলনের ব্যানারে বাউফল সরকারি কলেজের মাঠ থেকে বিজয় মিছিল বের হয়। মিছিলটি বাউফল পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ফের কলেজ মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এ মিছিলের আগ্রভাগে ব্যানার হাতে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম ইউসুফ। শেখ হাসিনার পলায়নের এক বছর পূর্তির বিজয় মিছিলে ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসর এসএম ইউসুফের অংশ গ্রহণ নিয়ে সব মহলে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
এসএম ইউসুফ বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ করলেও কারো কোনো ক্ষতি করেন নি। এখন তিনি ইসলামি আন্দোলন করেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী মুনতাসির তাসরিফ লামিম বলেন, ‘এসএম ইউসুফ একজন বিতর্কিত লোক ও ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার দোসর। জুলাই বিপ্লবের বিজয় মিছিলে তাঁর অংশগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তিনি কিভাবে মিছিলে এলেন তা তদন্ত করে দেখার দাবি করেন।’
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের বাউফল উপজেলার সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘আসলে তিনি (ইউসুফ) ভোল পাল্টানো মানুষ। তাঁরা তাঁকে (ইউসুফ) নিয়ে বিপদে আছেন। তাঁকে কেউ দাওয়াত দেয়নি। নিজ উদ্যোগে তাঁদের মিছিলে ঢুকে পড়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে তাঁরা সতর্ক থাকবেন।
রাজু