ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

তেজস Mk2 বনাম এফ-৩৫: ভারতের নতুন যুদ্ধবিমান কি টেক্কা দিতে পারবে আমেরিকার স্টেলথ জেটকে?

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ৫ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২২:৪৬, ৫ আগস্ট ২০২৫

তেজস Mk2 বনাম এফ-৩৫: ভারতের নতুন যুদ্ধবিমান কি টেক্কা দিতে পারবে আমেরিকার স্টেলথ জেটকে?

ছবি:সংগৃহীত

যুদ্ধবিমান মানেই এখন আর শুধু গতি বা আগুন ছোড়ার ক্ষমতা নয়—এটা একেকটা দেশের প্রযুক্তি, আত্মনির্ভরতা আর কৌশলগত শক্তির প্রতীক। সেই জায়গা থেকেই ভারতের তেজস Mk2 আর আমেরিকার বিখ্যাত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের তুলনা এখন আলোচনার কেন্দ্রে।

তেজস Mk2 ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি নতুন প্রজন্মের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, যেটা দেশের আকাশসীমা রক্ষা করবে আরও আধুনিকভাবে। আর এফ-৩৫ হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী স্টেলথ ফাইটার, যা ইতিমধ্যে অনেক দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।

চলুন দেখে নিই, কোন দিক দিয়ে কে এগিয়ে!

গতি ও শক্তির দৌড়ে কে সেরা?
আমেরিকার এফ-৩৫ এর ইঞ্জিন থেকে পাওয়া যায় ৪৩,০০০ পাউন্ড থ্রাস্ট, আর এর সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ১.৬ বা প্রায় ১,৯৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
ভারতের তেজস Mk2-তে যুক্ত হয়েছে শক্তিশালী GE F414 ইঞ্জিন, যার থ্রাস্ট ৯৮ কিলোনিউটন এবং এটি উড়তে পারে ম্যাক ১.৮, অর্থাৎ প্রায় ২,২০৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে।
এখানে গতি ও ইঞ্জিন পাওয়ারে তেজস কিছুটা এগিয়ে।

স্টেলথ ডিজাইন ও যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকার ক্ষমতা
এফ-৩৫ পুরোপুরি স্টেলথ ডিজাইন করা, যার রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। অন্যদিকে, তেজস Mk2 ততটা স্টেলথ না হলেও এতে আছে রাডার-শোষণকারী উপকরণ ও নতুন ডিজাইনের পাখা (canards), যা আগের মডেল থেকে ৭৫% কম রাডার সিগন্যাল রিফ্লেক্ট করে।

এফ-৩৫ স্টেলথে সেরা, তবে তেজস Mk2 আগের তুলনায় অনেক উন্নত।

সেন্সর ও স্মার্ট প্রযুক্তি
এফ-৩৫ এর বিশেষত্ব হলো ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ ক্যামেরা ও সেন্সর ফিউশন প্রযুক্তি—পাইলট চোখ বন্ধ করেও শত্রুর অবস্থান জানতে পারে!
তেজস Mk2-তেও যুক্ত হয়েছে দেশীয় প্রযুক্তির ‘উত্তম’ AESA রাডার, ইনফ্রারেড সার্চ অ্যান্ড ট্র্যাক সিস্টেম, এবং আধুনিক ডিজিটাল ককপিট। এটি একসাথে একাধিক লক্ষ্য শনাক্ত করতে পারে।

তুলনামূলকভাবে দুটিই সেন্সর ও প্রযুক্তিতে অত্যাধুনিক।

অস্ত্র বহন ক্ষমতা কেমন?
এফ-৩৫ একসাথে প্রায় ৮,১৬০ কেজি অস্ত্র বহন করতে পারে, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের হার্ডপয়েন্ট রয়েছে।
তেজস Mk2 পারে ৬,৫০০ কেজি পর্যন্ত বহন করতে, এবং তার ১৩টি হার্ডপয়েন্টে ভারতীয়, রাশিয়ান ও পশ্চিমা অস্ত্র যুক্ত করা সম্ভব।

অস্ত্র বহনে এফ-৩৫ এগিয়ে থাকলেও তেজসের রয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ অস্ত্রের সুবিধা।

রেঞ্জ বা উড়ন্ত অবস্থায় কত দূর?
এফ-৩৫ একটানা প্রায় ১,৫০০ কিমি যুদ্ধ করতে পারে, আর পুরো জ্বালানি ভরে সর্বোচ্চ যেতে পারে ২,২০০ কিমি।
তেজস Mk2-র রেঞ্জ আরও বেশি—ড্রপ ট্যাঙ্কসহ প্রায় ৩,০০০ কিমি এবং এতে আছে ‘mid-air refueling’ সুবিধা, মানে আকাশেই জ্বালানি ভরে আবার অনেক দূরে মিশন চালাতে পারে।

তেজস Mk2 দীর্ঘমেয়াদী মিশনের জন্য বেশি উপযোগী।


আমেরিকার এফ-৩৫ নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক স্টেলথ ফাইটারগুলোর একটি। কিন্তু ভারতের তেজস Mk2 তার নিজস্ব প্রযুক্তি, গতি, কার্যক্ষমতা আর মিশন নমনীয়তায় নিজের জায়গা করে নিচ্ছে গর্বের সঙ্গে।
স্বদেশি এই যুদ্ধবিমান শুধু একটি ফাইটার জেট না—এটা ভারতের আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরতা আর প্রতিরক্ষার ভবিষ্যতের প্রতীক।
 

 
 

মারিয়া

×