প্রতিবেশী যাতায়াতের রাস্তা না দিলে করণীয়, আইনজীবীর পরামর্শ

দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ করেই বহু মানুষের জমির মালিকানা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি যাদের হাতে বৈধ দলিল, খতিয়ান ও ভোগদখলের ইতিহাস রয়েছে, তারাও হারাচ্ছেন মালিকানা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নতুন পদক্ষেপ এবং “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন” অনুযায়ী, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে এসব জমির মালিকানা বাতিল করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, একজন মুসলমান যদি আরেক মুসলমানকে কোনো প্রকার আর্থিক বিনিময় ছাড়াই স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করেন, তাহলে সেটিকে “হেবা” বলা হয়। সাধারণত পরিবারের বয়স্ক সদস্য বা অভিভাবকগণ তাঁদের সন্তান, স্ত্রী, ভাইবোন কিংবা নাতি-নাতনিদের মাঝে হেবা দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি দান করে থাকেন।

সম্প্রতি জমি কেনাবেচা সংক্রান্ত প্রতারণার ঘটনায় পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (Power of Attorney) দলিল নিয়ে জনসচেতনতার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। অনেকেই জমি বিক্রির জন্য বিশ্বস্ত ব্যক্তি বা আত্মীয়কে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে থাকেন। তবে ভুল ব্যক্তি যদি এই পাওয়ার পান, তাহলে জমির মালিক বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জালিয়াতি রোধে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যেই বাতিল করা হতে পারে ১০ ধরনের জমির দলিল। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও ২০২৩ সালের ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালার আলোকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

দেশজুড়ে জমি নিয়ে প্রতারণা, জালিয়াতি ও বেদখল রোধে কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে নতুন বিধিমালা কার্যকর করা হয়েছে। এ বিধিমালার আওতায় জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অ্যাডভোকেট মিমি কাতুন বলেছেন, অনেক সময় দেখা যায়—স্বামী তার সমস্ত সম্পত্তি স্ত্রীকে হেবা করে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেই স্ত্রী আর স্বামীর সঙ্গে সংসার করেন না, অন্য কোথাও চলে যান কিংবা বাপের বাড়িতে চলে যান। তখন স্বামী অনেক সময় চিন্তায় পড়ে যান এবং জানতে চান, হেবা দলিলটি বাতিল করার কোনো সুযোগ আছে কি না।

ডিভোর্স (তালাক) দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব কাবিননামার মামলা করা উচিত, তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। সাধারণত, তালাকের নোটিশ পাঠানোর পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিস করার সুযোগ থাকে এবং এরপর মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী, তালাকের ৯০ দিনের মধ্যে তা নিবন্ধিত করতে হয়। দেনমোহর বা অন্যান্য পাওনা আদায়ের জন্য বিবাহবিচ্ছেদের রায় বা ডিক্রির কপি পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব পারিবারিক আদালতে মামলা করা যেতে পারে। 

বাংলাদেশে পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ও বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি এমনই একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা আলোচনায় এসেছে, যেখানে স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবেসে নিজের কষ্টার্জিত অর্থে স্ত্রীর নামে জমি কিনে দেন। কিন্তু কিছুদিন পর স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে এবং স্বামী বিষয়টি জানার পর তাকে প্রশ্ন করলে স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তালাক দিয়ে দেয়। এখন সেই স্বামী চাইছেন, তার টাকায় কেনা জমিগুলো যেন তাকে ফেরত দেওয়া হয়।

জমি কেনা-বেচার আগে দলিল যাচাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ, ভুয়া এনআইডি, জাল দলিল ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেকেই আজ নিঃস্ব। জমির মূল মালিকের নামে নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে জালিয়াত চক্র বিক্রি করে দিচ্ছে কোটি টাকার সম্পত্তি। বিশেষ করে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত বা খাজনা না দেওয়া জমিই তাদের প্রধান টার্গেট।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে আইনি সহায়তা ও সচেতনতা প্রদানে এডভোকেট মোহাম্মদ জাকির হোসাইন সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় লিগাল নোটিস নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

অনেকেই আছেন যারা জানতে চান, তাদের বাবা বা দাদার নামে বর্তমানে কোথায় কতটুকু জমি আছে। কিন্তু দাগ বা খতিয়ান নাম্বার জানা না থাকায় অনেকেই তথ্য খুঁজে পান না। এখন মোবাইল থেকেই মাত্র কয়েকটি ধাপে আপনি জানতে পারবেন আপনার পূর্বপুরুষদের নামে জমির অবস্থান ও পরিমাণ।

ব্যাংক চেক—এটি অনেক সময়ই হয় আস্থা বা আর্থিক লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু জানেন কি, সামান্য এক-দুইটি ভুলের কারণে আপনি হারাতে পারেন সবকিছু? এমনকি আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে হতে পারে আপনাকেই!

পুত্রসন্তান না থাকলে একজন পুরুষের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তিতে কন্যাসন্তানরাই প্রধান উত্তরাধিকার হন—তবে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, পুরো সম্পত্তি কেবল তাদের একক দখলে চলে যায় না।

আপনার বিরুদ্ধে কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা করে, আপনাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলে, তাহলে কি আপনি চুপচাপ সহ্য করবেন? না। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারী কার্যবিধির আইনি বিধান অনুসরণ করে আপনি সেই মিথ্যা মামলার বাদীর বিরুদ্ধেই নিতে পারেন শক্ত পদক্ষেপ। এমনকি তাকে জেল, জরিমানা এবং ক্ষতিপূরণের আওতায়ও আনা সম্ভব।

একটি সময় ছিল যখন জমি বেদখলের পর দখল পুনরুদ্ধার করতে বছরের পর বছর আদালতের দ্বারে ঘুরতে হতো। মামলার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা জমির প্রকৃত মালিকদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করত। তবে এখন আর সেই ঝামেলা নেই। কারণ, নতুন আইন ও বিধিমালার আওতায় এখন মাত্র তিন মাসেই পাওয়া যেতে পারে বেদখল হওয়া জমির দখল ফেরত। কীভাবে?জেনে নিন সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া।

দেশে জমি–সম্পত্তি, মালিকানা বা দখলের বিষয়ে বিরোধের কারণে দেওয়ানি মামলা বা সিভিল সুটের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। আর তাই অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন এই ধরনের মামলার বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে। ১৯০৮ সালের সিভিল প্রসিডিউর কোড (সিপিসি) অনুযায়ী একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের থেকে বিচার সমাপ্তি পর্যন্ত তিনটি বড় ধাপের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয় প্রাক-বিচার পর্ব বা প্রি‑ট্রায়াল স্টেজ, বিচার পর্ব বা ট্রায়াল স্টেজ এবং বিচার–পরবর্তী পর্ব বা পোস্ট‑ট্রায়াল স্টেজ। নিচে প্রতিটি ধাপ এক নজরে তুলে ধরা হলো।