ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

অন্ধ হলেও জীবন থেমে নেই: বাবার চিকিৎসার ভার কাঁধে নিয়েছেন বাউল আসলাম

রিয়াজুল ইসলাম সেতু, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ২১:০২, ১৯ জুন ২০২৫

অন্ধ হলেও জীবন থেমে নেই: বাবার চিকিৎসার ভার কাঁধে নিয়েছেন বাউল আসলাম

ছবি: জনকন্ঠ

পিতা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সংসারের ভার এসে পড়েছে অন্ধ ছেলে আসলামের ওপর। আগের মতো বাউলের গানের আসর না জমায় এই অন্ধ বাউল আসলামের আয় এখন আগের মত নেই বললেই চলে। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বটতৈল গ্রামে বাড়ি অন্ধ বাউল আসলামের। চার বছর ধরে শরীরের ব্যথা ও হাঁপানি রোগে অসুস্থ তার পিতা আজাদ সর্দার, বর্তমানে তিনি কানেও খুব একটা ভালো শুনতে পান না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হারিয়েছেন কাজের ক্ষমতা। তিন পরিবারের সংসারের বোঝা টানতে হচ্ছে তার অন্ধ ছেলে আসলাম। শুধু তাই নয় অন্ধ আসলাম গৃহপালিত গরু ছাগলের যত্ন ও গো- খাদ্য তাকেই সংগ্রহ করে দিতে হয় নিয়মিত। কাজের ফাঁকে প্রতিবেশীদের সাথে গানের আসর বসাত তাই তো তার নাম দিয়েছেন বাউল আসলাম। এখন তিনি এই নামে পরিচিত।     

বাউল আসলাম বলেন, জন্ম থেকে সে অন্ধ। অনেক ডাক্তার, কবিরাজ এবং সর্বশেষ খুলনা শিরোমণি চক্ষু হাসপাতাল চোখের অপারেশন করেও দৃষ্টি শক্তি আর ফিরে পাননি। তবে তার গান শুনতে বা গাইতে ভালোবাসতেন। একপর্যায়ে দেখতে না পেলেও গান- বাজনার ছন্দের তালে তালে এবং মেধা দিয়ে বাজাতো দোতারা বাদ্যযন্ত্র। এভাবেই চলে আসছে বহু বছর ধরে গান-বাজনার আসর। আর সংগীত নিয়ে বেঁচে আছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। একবেলা খাচ্ছেন তো আরেক বেলায় না খেয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাকে। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে তিন মাস পর পর ২ হাজার ৫শত টাকা পেয়ে থাকেন। কিন্তু বর্তমান বাজার সেটাও এখন কষ্টকর। অন্ধ অবস্থায় তিনি শহর থেকে গ্রাম হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে একাই লাঠির সাহায্যে ঘুরে বেড়ান এবং সংগীত পরিবেশন করে টাকা আয় রোজগার করেন। 

তবে পিতার বিষয়ে তিনি বলেন, তার পিতা অনেক বছর ধরে কোন কাজ কর্ম করতে অক্ষম। তাকেই চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়। কারণ তিনি ছাড়া তার পিতাকে দেখার মত তেমন কেউ নেই। অর্থের অভাবে তার পিতার চিকিৎসা এখন বন্ধ রয়েছে। 

এ বিষয়ে তার প্রতিবেশীরা বলছেন, অন্ধ হয়েই আসলাম জন্ম গ্রহণ করেন। পরিবার বলতে পিতা ও মাতা ছাড়া তার সংসারে তেমন কেউ নেই। আগে আসলামের পিতা কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু আসলামের পিতা অসুস্থ থাকায় সংসারে হাল ধরেছেন আসলাম। হাট বাজারে গান করেই তার সংসার চলছে। তবে তাকে আর্থিক সাহায্যে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা।

Mily

×