ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

১৯৭৯ সালে ইরানে যেভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়!

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ১৯ জুন ২০২৫

১৯৭৯ সালে ইরানে যেভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়!

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে ১৯৭৯ সালের ইরানে ঘটে যাওয়া ইসলামী বিপ্লব একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করে। পশ্চিমা সমর্থিত রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে দেশটিতে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সূচনা হয়। এই বিপ্লব শুধু ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে পাল্টে দেয়নি, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এক দীর্ঘস্থায়ী বৈরিতার সূচনা করে, যা এখনও বহাল আছে।

 

 

ইরানের রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয় আরও আগে, ১৯৫৩ সালে। সে সময় মোহাম্মদ মোসাদ্দেক দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং দেশের তেলসম্পদ জাতীয়করণের উদ্যোগ নেন। এই পদক্ষেপ পশ্চিমা স্বার্থে বড় আঘাত হানে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় মোসাদ্দেক সরকারকে উৎখাত করা হয় এবং শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলবিকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানো হয়। এই হস্তক্ষেপ ইরানের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে তার কৌশলগত মিত্র হিসেবে ব্যবহার করত।

তবে ১৯৭৯ সালে দৃশ্যপট বদলে যায়। বিলাসী জীবনযাপন, পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন ও সাধারণ জনগণের প্রতি অবহেলা ইরানিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। শুরু হয় শাহবিরোধী আন্দোলন, ধর্মঘট ও গণবিক্ষোভ। এই অসন্তোষের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নির্বাসনে থাকা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে আসেন এবং বিপ্লবের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বেই ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

 

 

শাহের পতনে যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্টি হয় প্রবল ক্ষোভ ও হতাশা। এরপর থেকেই ইরানকে নানা কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক চাপের মধ্যে ফেলতে শুরু করে ওয়াশিংটন। আজও সেই চাপ বহাল রয়েছে, বরং সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও তীব্র হয়েছে। ইরানকে ঘিরে রাখতে ও বিশ্বমঞ্চে কোণঠাসা করতে পশ্চিমা মিত্ররা নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে।

৪৬ বছর আগে সংঘটিত সেই ইসলামী বিপ্লব আজও ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে গভীর বিভাজন রেখা টেনে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে এটি ছিল এক প্রতিক্রিয়াশীল পরিবর্তন, যা তাদের প্রভাব ও স্বার্থে আঘাত হেনেছিল। সেই আঘাতের প্রতিশোধ নিতে আজও যেন মরিয়া হয়ে আছে ওয়াশিংটন। ইরানের দৃষ্টিতে এটি ছিল আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার পুনরুদ্ধার, যার প্রতিধ্বনি এখনো তাদের রাষ্ট্রচিন্তা ও বৈদেশিক নীতিতে প্রতিফলিত হয়।

ছামিয়া

×