
হার্টের সমস্যা খুব কমই ধ্বংসাত্মক কোনো সিগন্যাল দিয়ে শুরু হয়। এটি ধীরে ধীরে আসে, নীরব ও প্রায়শই ভুল ব্যাখ্যা করা হয় বা গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে চলা হয়। প্রতিটি সতর্কবার্তা উচ্চস্বরে আসে না—অনেক সময় সাধারণ ক্লান্তি বা সামান্য শ্বাসকষ্টের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে ভয়ংকর কোনো বার্তা।
কার্ডিওলজির বিশেষজ্ঞ ড. জেরেমি লন্ডন জানিয়েছেন, প্রাথমিক উপসর্গগুলোর প্রতি যত্নবান হলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। নিচে উল্লেখ করা হলো হৃদরোগের এমন ৩টি সাধারণ অথচ ভুল বোঝা উপসর্গ, যা দেখলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
১. বুকের চাপ বা অস্বস্তি মানেই গ্যাস্ট্রিক নয়
বুকে চাপ লাগা বা অস্বস্তি অনেকেই অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক বা স্ট্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। অনেকে বলেন, “গ্যাসের জন্যই হবে।” কিন্তু এই চাপ যদি মাঝেমাঝে ফিরে আসে, কেন্দ্রীয় বা বাম পাশে টানটান অনুভব হয়, তখন তা হালকাভাবে নেওয়া চলবে না।
ড. লন্ডনের মতে, বুকের মাঝ বরাবর বা বাম পাশে টাইটনেস, ভারী লাগা বা অস্বস্তি হৃদরোগের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলোর একটি। এমনকি যদি ব্যথাটা খুব তীব্র না-ও হয় বা দ্রুত চলে যায়, সেটিও বিপদের পূর্বাভাস হতে পারে—বিশেষত যদি এর সঙ্গে ঘাম, বমিভাব, অথবা হাতে বা চোয়ালে ব্যথা দেখা দেয়।
২. সামান্য হাঁটাহাঁটিতেই শ্বাসকষ্ট? সতর্ক হোন এখনই
সিঁড়ি ভাঙা হঠাৎ করে কঠিন মনে হচ্ছে? আগে যেটা অনায়াসে পারতেন, সেটা করতে হঠাৎই বিশ্রাম দরকার পড়ছে? অনেকেই ভাবেন এটা বয়সের প্রভাব, ঘুমের ঘাটতি বা ফিটনেস কমে যাওয়ার কারণে হচ্ছে।
কিন্তু ড. লন্ডনের মতে, যদি কোনও সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই শ্বাস নিতে কষ্ট হয়—বিশেষ করে অল্প হাঁটাহাঁটি, কথা বলা বা শুয়ে থাকার সময়—তবে এটা হার্ট ভালোভাবে রক্ত পাম্প করতে পারছে না, তার ইঙ্গিত হতে পারে।
এ ধরনের শ্বাসকষ্ট শুরুতে হালকা হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বিশেষ লক্ষণ: কোনো ভাইরাস নেই, ওজনও বাড়েনি, কিন্তু তারপরও আগের মতো ফ্রি ভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না।
৩. অজান্তেই কমে যাচ্ছে স্ট্যামিনা—কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না
এনার্জি লেভেল কমে যাচ্ছে। কাজের মাঝে মাঝে বারবার বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। অনেকেই একে স্ট্রেস, ঘুম না হওয়া, বা বয়সের ফল মনে করে থাকেন।
কিন্তু ড. লন্ডন বলেন, প্রতিদিনের সাধারণ কাজ করতে গিয়ে যদি শরীর হঠাৎ করেই বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, বা হাঁটাহাঁটিতে আর আগের মতো গতিশীলতা না থাকে—তবে সেটাও হার্টের সমস্যার সূচনা হতে পারে। এটি হার্ট ফেইলিওর বা করোনারি আর্টারি ডিজিজের প্রাথমিক লক্ষণ।
সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, এটি এতটাই ধীরে ধীরে হয় যে মানুষ নিজের অজান্তেই মানিয়ে নিতে থাকে—সিঁড়ির বদলে লিফট, হাঁটার বদলে বসে পড়া—এভাবেই শরীর ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু আমরা বুঝি না।
সতর্কতা জরুরি:
এই উপসর্গগুলো তীব্র না হলেও, উপেক্ষা করলে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। নিজের শরীরের ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোকে গুরুত্ব দিন। কেননা বিপদ সবসময় সরব হয়ে আসে না—অনেক সময় সেটা নিঃশব্দে ধেয়ে আসে।
Jahan