
ছবি: জনকণ্ঠ
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
তাদের মতে, শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করলে ভবিষ্যতে একটি মাদকমুক্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
এই বিষয়ে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় যদি ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়, তবে শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই মাদক থেকে দূরে থাকার বিষয়ে সচেতন থাকবে। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষা করবে না, বরং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিজীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিজিই বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, “প্রথমত ডোপ টেস্টের বিষয়ে যদি বলা হয় তাহলে বাংলাদেশের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সেখানে দেখা যাচ্ছে তারা ডোপ টেস্টের মাধ্যমে প্রথম বর্ষে ভর্তি নিচ্ছেন। এমনকি শাবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম শিক্ষাবর্ষে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ভর্তি ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক স্টুডেন্ট ভর্তি হওয়ার পরে মাদকের সাথে জড়িত হয়ে যায়, অনেকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে যায়। এভাবে অনেকের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যায়। সামগ্রিক চিন্তায় ডোপ টেস্ট ভালো মানুষ তৈরির পাশাপাশি ভালো ক্যারিয়ার তৈরিতে সহায়ক হবে বলে আশা করি।”
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বর্তমানে আমাদের সমাজে মাদক সেবনের হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কাজে কম বয়সী শিক্ষার্থীদের একটা অংশ জড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত রাখতে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। মাদকের বিস্তার রোধ করতে, নতুনদের ভর্তির ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।”
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাহবুবুর রহমান বলেন, "আমি মনে করি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে যারা স্নাতক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসে, সবার এক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট জরুরি। কেননা যেকোনো নেতিবাচক দিক না রাখাই বাঞ্ছনীয়। প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হলে যারা মাদকাসক্ত আছে, তারা শুরুতেই বাদ পড়ে যাবে। এতে করে ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। আর একটা সুশিক্ষা ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে উঠবে। এর আগেও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় সকল শিক্ষার্থীর ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হলে একদিকে মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ সম্ভব হবে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে, সমাজে মাদকবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, সহপাঠীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রোধ পাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও নিরাপত্তা রক্ষা পাবে বলে আমি মনে করি।”
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিল আল হাসান রাব্বি বলেন, "মাদক একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি, যা শিক্ষার্থী সমাজকেও গ্রাস করছে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) যেন এই মরণনেশার ছোবল থেকে মুক্ত থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে আমরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা, ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার দাবি জানাচ্ছি। বর্তমানে দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভর্তি প্রক্রিয়ায় ডোপ টেস্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা একটি সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। মাভাবিপ্রবিতেও ভর্তি, আবাসিক হলে ওঠা এবং সন্দেহভাজন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট চালু করা জরুরি বলে আমরা মনে করি। একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও মাদকমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, শিক্ষার্থীদের এই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নীতিমালাভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজিম আখন্দ বলেন, “ডোপ টেস্টের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। তবে এতে কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, যদি আমরা এটি শিক্ষার্থীদের ওপর বাধ্যতামূলক করি, তবে তাদের ওপর একটি আর্থিক চাপ তৈরি হবে। গুচ্ছতে যেটি দেখি শিক্ষার্থীরা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিক্যাল—এগুলো বাদ দিয়ে এখানে আসছে। ফলে শুধু আমাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এটি চালু করা হলে শিক্ষার্থীদের প্রতি একধরনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে।
এছাড়া, আমাদের বরাদ্দ কমে যাওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও একটি সুষ্ঠু অ্যাকাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন করে তুলতে পারে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে সুন্দর ও মাদকমুক্ত রাখতে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা সুস্থ ও সচেতন জীবন যাপন করুক। মাদকাসক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। তবে আমরা শুধু শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি না, বরং শিক্ষার্থীদের সচেতনতার মাধ্যমে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার পক্ষেও সমর্থন করি। কারণ অনেক সময় হতাশা, নতুন পরিবেশ ও বন্ধুদের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা ভুল পথে চলে যায়। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখব; ডোপ টেস্ট কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। যদি বিশ্ববিদ্যালয় নিজে এটি না করে, তবে নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া কঠিন হবে, কারণ শিক্ষার্থীরা যেকোনো সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারে।”
মুমু ২