
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্ভাব্য ‘পারমাণবিক যুদ্ধ’ তিনি নিজেই থামিয়েছেন। বুধবার (১৮ জুন) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ৩৫ মিনিটের এক টেলিফোন আলাপের পর ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। অথচ মোদি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ছিল পাকিস্তানের অনুরোধে এবং তা শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক স্তরে আলোচনা করেই হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি পাকিস্তানকে ভালোবাসি। আমি মনে করি মোদি একজন অসাধারণ মানুষ। গতরাতে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে যাচ্ছি। এবং হ্যাঁ, আমি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছি।’ ট্রাম্প দাবি করেন, ‘একপক্ষ থেকে (সম্ভবত আসিম মুনির) এবং মোদি ভারতের পক্ষ থেকে শান্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারা একে অপরকে আক্রমণ করছিল, এবং দু’পক্ষই পারমাণবিক শক্তিধর। আমি সেটা থামিয়েছি।’
তবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মোদি স্পষ্টভাবে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, ‘এই পুরো প্রক্রিয়ার কোথাও ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি বা কোনো ধরনের মধ্যস্থতার কথা আলোচনাতেই আসেনি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা হয়েছে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান যোগাযোগ চ্যানেলের মাধ্যমেই, এবং সেটি পাকিস্তানের পক্ষ থেকেই শুরু হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর ছিল পেহেলগামে হওয়া সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া। এটি ছিল সুপরিকল্পিত ও সীমিত প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়া, যাতে কেবল সন্ত্রাসী ঘাঁটি এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের নির্দিষ্ট টার্গেটেই হামলা চালানো হয়।’
মিশ্রি জোর দিয়ে বলেন, ‘ভারত কখনোই কোনো মধ্যস্থতা মেনে নেয় না এবং ভবিষ্যতেও নেবে না। এই বিষয়ে ভারতের রাজনৈতিক মহলে পূর্ণ ঐকমত্য রয়েছে।’
তবুও হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প আবারও সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যুদ্ধ থামিয়েছি। অথচ একটি সংবাদও লেখা হয়নি এ নিয়ে। দুটি বড় পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়ে দিলাম, কেউ কিছু লিখল না। তবে সমস্যা নেই, কারণ মানুষ জানে আমি কী করেছি।’
উল্লেখ্য, ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ মে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের কয়েকটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানোর পর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস) ভারতের ডিজিএমও-র সঙ্গে আলোচনা করতে চান। ভারতের হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইসলামাবাদের নূর খান (চকলালা) বিমানঘাঁটি। এরপরই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে উপনীত হয় দুই দেশ।
এনডিটিভি আরও জানায়, তবুও ট্রাম্প এই কৃতিত্ব নিজের ঘাড়ে নিতে পিছপা হননি। এমনকি গত রবিবারও তিনি বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েলকে চুক্তিতে আনতে হবে এবং তা হবে—ঠিক যেভাবে আমি ভারত ও পাকিস্তানকে এক করেছিলাম। সেই সময় আমি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে আলোচনা টেবিলে যুক্তি, ঐক্য এবং শান্তি ফিরিয়ে এনেছিলাম।’
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এমন মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাস্তব পরিস্থিতি থেকে অনেক দূরে। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি নিজেকে ‘শান্তি স্থাপনকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব