
ছবিঃ জনকণ্ঠ
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না ১ হাজার ৩শ’রও বেশি শিক্ষার্থী। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নিবন্ধনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৭৬ জন, অথচ চলতি বছরের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন মাত্র ১ হাজার ৭৯৯ জন। ফলে ৪০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকছেন—যা শিক্ষা খাতে এক গভীর সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিবন্ধন আছে, অংশগ্রহণ নেই
উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেন ২,২৭৬ জন। এদের মধ্যে মাত্র ১,৩৭৪ জন পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন।
অতিরিক্ত হিসেবে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের যোগ করে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১,৭৯৯ জন। যদিও এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৭০ জন বেশি, তবুও নিবন্ধিত শিক্ষার্থী অনুপাতে এটি যথেষ্ট নয়।
২০২৪ সালে সন্দ্বীপ উপজেলায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১,৭৩০ জন। পাস করেছিলেন ৮৩৩ জন এবং ফেল করেছিলেন ৮৯৭ জন। ওই বছর ফেল করা ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২৫ সালের পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন মাত্র ৩৫৯ জন। এতে বোঝা যাচ্ছে, আগের বছরের ফেল করা শিক্ষার্থীদের বড় অংশও পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার আগ্রহ দেখাননি।
ঝরে পড়ার কারণ কী?
এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা থেকে ছিটকে যাওয়ার বিষয়ে সরকারি হাজী আবদুল বাতেন কলেজের অধ্যক্ষ এস. এম. আবুল হাশেম বলেন, “এসএসসি পাসের পর অনেক শিক্ষার্থী চাকরি বা খণ্ডকালীন পেশায় যুক্ত হয়ে যায়। কেউ কেউ পারিবারিক কারণে বিবাহিত হয় বা অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মূলত দারিদ্র্য, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং সচেতনতার অভাবই এর মূল কারণ।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু সরকারিভাবে বিনামূল্যে বই বিতরণ বা শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করলেই শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা সম্ভব নয়। পরিবার, সমাজ এবং প্রশাসন—তিনটি স্তরে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শমূলক কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।”
জাতীয় প্রেক্ষাপটে চিন্তার বিষয়
সন্দ্বীপের এই পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য উপজেলাতেও প্রতিফলিত হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। মাধ্যমিক পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পৌঁছেও শিক্ষার্থীদের বড় অংশের ঝরে পড়া মানবসম্পদ উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট নিরসনে সরকারকে শুধু পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর না করে বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে অভিভাবকদেরও ভূমিকা রাখা প্রয়োজন সন্তানদের নিয়মিত পড়াশোনায় ধরে রাখতে।সন্দ্বীপে এইচএসসি পরীক্ষার এ চিত্র শুধু একটি উপজেলার নয়—বরং এটি গোটা দেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও উন্নয়নের দিকনির্দেশনা বহন করে। তাই সময় এসেছে শিক্ষা খাতে ঘাটতির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার।
আলীম