
ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। তবে বাস্তবতা হলো, সব দেশ এই স্বপ্নকে সমানভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সুযোগ দেয় না। ভিসা অনুমোদনের হার, টিউশন ফি, স্কলারশিপের সুযোগ, ভাষার সহজলভ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে কিছু দেশ সত্যিই অনেক বেশি সহজ ও সহানুভূতিশীল।
জেনে নেওয়া যাক এমন ১০টি দেশ যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ অনেক সহজ এবং কেন সেগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী:
১. পোল্যান্ড
পোল্যান্ড ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
* অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে IELTS ছাড়াই ভর্তি পাওয়া যায়।
* সৎ ও প্রকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ।
* টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার খরচ পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় অনেক কম।
* অনেক কোর্সই ইংরেজিতে পড়ানো হয়।
বিশেষ টিপস: কম বাজেটে ইউরোপীয় ডিগ্রি পেতে চাইলে পোল্যান্ড চমৎকার বিকল্প।
২. মালয়েশিয়া
এশিয়ার মধ্যে সাশ্রয়ী ও ইংরেজিভাষী শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া অনন্য।
* ভিসা প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত।
* টিউশন ও থাকার খরচ পশ্চিমা দেশের তুলনায় অনেক কম।
* অধিকাংশ কোর্স ইংরেজিতে।
* যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ প্রোগ্রাম রয়েছে।
বিশেষ টিপস: পশ্চিমা দেশের ভিসা নিয়ে শঙ্কা থাকলে মালয়েশিয়া হতে পারে নিরাপদ ও বুদ্ধিমান পছন্দ।
৩. জার্মানি
উচ্চমানের বিনামূল্যে শিক্ষার জন্য জার্মানি স্বপ্নের দেশ।
* পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টিউশন ফি নেই।
* অনেক কোর্স ইংরেজিতে।
* ভিসা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, তবে অর্থ প্রমাণ দেখাতে হয়।
* পড়াশোনা শেষে ১৮ মাস কাজ খোঁজার সুযোগ পাওয়া যায়।
বিশেষ টিপস: টাকার অভাবে পিছিয়ে পড়লে জার্মানি হতে পারে আদর্শ গন্তব্য, বে ব্লকড অ্যাকাউন্টের প্রস্তুতি নিতে হবে।
৪. নরওয়ে
নরওয়ে এমন একটি দেশ, যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একেবারে বিনামূল্যে।
* কোনো টিউশন ফি নেই।
* ইংরেজি ভাষায় মাস্টার্স কোর্স সহজলভ্য।
* ভিসা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ।
* পড়াশোনার সময় পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ আছে।
বিশেষ টিপস: ঠান্ডা সহ্য করতে পারলে এবং বিশ্বমানের শিক্ষা চাইলে নরওয়ে নিঃসন্দেহে সেরা।
৫. কানাডা
কানাডা তার খোলামেলা ও অভিবাসন-বান্ধব নীতির জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে।
* আসল ও সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট থাকলে ভিসা অনুমোদনের হার বেশি।
* আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো সাপোর্ট সিস্টেম।
* পড়াশোনার সময় ও পরে কাজের সুযোগ (PGWP)।
* স্থায়ী আবাসনের (PR) সুস্পষ্ট পথ রয়েছে।
বিশেষ টিপস: শিক্ষা, চাকরি এবং অভিবাসনের সুযোগ, সব একসাথে চাইলে কানাডাই শ্রেষ্ঠ।
৬. নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ড শান্তিপূর্ণ, সুন্দর পরিবেশে মানসম্মত শিক্ষা পেতে আদর্শ দেশ।
* সহজ ও কম প্রতিযোগিতামূলক ভিসা প্রক্রিয়া।
* শিক্ষার্থীদের উপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়।
* পড়াশোনার সময় ও পরে কাজের সুযোগ রয়েছে।
বিশেষ টিপস: পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক শান্তি চাইলে নিউজিল্যান্ড উপযুক্ত।
৭. আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ড প্রযুক্তিনির্ভর, ইংরেজিভাষী, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিভা আকর্ষণে আগ্রহী।
* সহজ ভিসা শর্তাবলী।
* বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানায়।
* প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে চাকরির সুযোগ বেশি।
* স্নাতকোত্তর শেষে ১–২ বছরের “স্টে-ব্যাক” ভিসা পাওয়া যায়।
বিশেষ টিপস: যুক্তরাজ্যের তুলনায় কম চাপ ও খরচে প্রায় একই সুযোগ।
৮. অস্ট্রেলিয়া
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় উচ্চশিক্ষার গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া।
* স্বচ্ছ ও সংগঠিত ভিসা প্রক্রিয়া।
* প্রচুর কোর্সের অপশন।
* শিক্ষার্থী ও স্নাতকদের জন্য কাজের সুযোগ।
* ৪ বছর পর্যন্ত পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া যায় (কিছু ক্ষেত্রে)।
বিশেষ টিপস: খরচ সামলাতে পারলে, অস্ট্রেলিয়া সেরা বিনিয়োগ।
৯. নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডস ইউরোপের এমন একটি দেশ, যেখানে ২০০০+ কোর্স পুরোপুরি ইংরেজিতে পড়ানো হয়।
* যুক্তরাজ্য ও আমেরিকার তুলনায় টিউশন তুলনামূলক কম।
* আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ।
* “অরিয়েন্টেশন ইয়ার” ভিসা, স্নাতকোত্তর পর চাকরি খোঁজার সুযোগ।
বিশেষ টিপস: ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও ইংরেজি শিক্ষার মিশ্রণ চাইলে সঠিক গন্তব্য।
১০. যুক্তরাজ্য
যদিও সাম্প্রতিক অভিবাসন পরিবর্তনের ফলে কিছুটা কঠিন হয়েছে, তবুও যুক্তরাজ্য এখনো আকর্ষণীয়।
* উচ্চমাত্রায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করে।
* ভাষাগত কোনো বাধা নেই।
* ২ বছরের গ্র্যাজুয়েট রুট ভিসা।
চ্যালেঞ্জ:
* টিউশন ও খরচ বেশি।
* অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন পরিবার (spouse/children) আনতে পারছে না।
* পড়াশোনার পরে স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে।
বিশেষ টিপস: দ্রুত বিশ্বমঞ্চে নিজেকে তুলে ধরতে চাইলে যুক্তরাজ্য এখনো কার্যকর, শুধু খরচের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
ছামিয়া