
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের উপর একটি বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযান শুধু কিছু স্থাপনা বা ঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য ছিল না, বরং এটি ছিল একটি গভীর পরিকল্পনার অংশ। ইসরায়েল চায়, ইরান যেন তাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করে এবং বর্তমান সরকার পতনের দিকে যায়।
এই হামলায় ইরানের বহু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি এবং এর অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান আমির আলি হাজিজাদেহ। এই হত্যাগুলো ইরানের সামরিক বাহিনীর জন্য অনেক বড় ধাক্কা।
ইসরায়েল বলছে, তারা ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা বন্ধ করতে চায়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আসলে ইরানের সরকার পতনের একটি পরিকল্পনা। ইসরায়েলের অনেক নেতাই বিশ্বাস করেন, ইরানের বর্তমান সরকার না থাকলে তবেই দেশটির পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হতে পারে।
এই অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েল শুধু বোমা বা ড্রোন ব্যবহার করেনি। তারা সাইবার হামলা চালিয়েছে, সরকারি ভবন ও টিভি চ্যানেলে আঘাত করেছে। ইরানের মানুষের মধ্যে ভয়, বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ ছড়াতে নানা রকম প্রচার চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি বার্তায় বলা হয়েছে, এই যুদ্ধ ইরানের জনগণের নয়, এটি শুধু সরকারের যুদ্ধ। তাদের এই কথায় অনেক প্রবাসী ইরানিও সায় দিয়েছেন। যেমন, ইরানের সাবেক রাজা শাহের ছেলে রেজা পাহলভি এবং জনপ্রিয় সাবেক ফুটবলার আলি করিমি এই হামলার পক্ষে কথা বলেছেন।
তবে বাস্তবতা হয়েছে ঠিক তার উল্টো। ইরানিদের বড় একটি অংশ, এমনকি যারা আগে সরকারের বিরুদ্ধে ছিলেন তারাও এখন একজোট হচ্ছেন। তাদের মতে, এটি একটি বিদেশি হামলা। দেশের বিরুদ্ধে হামলা হলে তা সবাই মিলে প্রতিরোধ করা উচিত। এতে করে জাতীয় ঐক্য আরও শক্ত হচ্ছে।
২০২২ সালে ইরানে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর এক বড় আন্দোলন হয়েছিল, যার নাম ছিল “নারী, জীবন, স্বাধীনতা”। সেই আন্দোলনের কর্মীরাও এখন চুপ। তারা বলছেন, বিদেশি হামলায় যোগ দেওয়া মানে বিশ্বাসঘাতকতা।
ইরানের বিখ্যাত ফুটবলার আলি দাই বলছেন, “আমি মরতে রাজি, কিন্তু দেশবিরোধী হতে পারি না।” আর এক সাবেক বিচারক, যিনি একসময় সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন, তিনি বলেছেন, “আমি দেশের যোদ্ধাদের হাতে চুমু খাই।”
এই ঘটনাগুলো দেখাচ্ছে, ইসরায়েলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হচ্ছে। তারা ভেবেছিল, ইরানে বিদ্রোহ শুরু হবে, সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মানুষ উল্টো ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ আরও জেগে উঠছে।
ইরানের সরকার হয়তো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এই ঘটনার পর। ইতিহাস বলছে, ইরানি জাতি বারবার বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়েছে এবং জয়ী হয়েছে। এবারও হয়তো তার ব্যতিক্রম হবে না। বোমা ও সাইবার হামলায় তাদের মন ভাঙেনি, বরং দেশের প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
এম.কে.