
ছবি: প্রতীকী
অনেক দিন আগের কথা। একটি দেশে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বসবাস করত। সেখানে কিছু খ্রিস্টানও থাকতেন। দেশটির শাসক ছিলেন একজন কঠোর ও উগ্র ইহুদি। তিনি খ্রিস্টানদের উপর নিয়মিত অত্যাচার করতেন। নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতেন, রাস্তায় মারধর করতেন, এমনকি হত্যা করতেও দ্বিধা করতেন না।
এভাবে হাজার হাজার খ্রিস্টান মারা গেলেও খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। তখন রাজা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি তার সবচেয়ে চালাক উজিরকে ডেকে একটি পরিকল্পনা করতে বলেন।
উজির রাজাকে বলে, অত্যাচার করে কাজ হবে না। বরং মানুষের মনে খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হচ্ছে। উজির প্রস্তাব দেয় একটি নাটক সাজাতে হবে, যেখানে সে নিজেই খ্রিস্টান সেজে মানুষের মন জয় করবে। রাজা তাতে রাজি হয়ে যায়।
পরিকল্পনা মতো একদিন উজিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। শহরের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে তাকে চাবুক মারা হয় এবং ফাঁসির সাজা ঘোষণা করা হয়। পরে এক পারিষদের অনুরোধে তাকে হত্যা না করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এই খবর দ্রুত পার্শ্ববর্তী খ্রিস্টান দেশে পৌঁছে যায়। উজির সেখানে গিয়ে নিজেকে একজন নির্যাতিত খ্রিস্টান বলে পরিচয় দেয়। খ্রিস্টানরা তাকে সম্মান দেয় এবং ধর্ম প্রচারের সুযোগ দেয়।
কিছুদিনের মধ্যে সে খ্রিস্ট ধর্মের একজন বড় বক্তা হয়ে ওঠে। দেশজুড়ে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি রাজা ও বড় বড় ধর্মীয় নেতারাও তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে।
ছয় বছর পর, যখন খ্রিস্টানরা তার প্রতিটি কথাকে খোদার বাণী মনে করতে শুরু করে, তখন সে তার আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করে।
তখন দেশটিতে ১২টি খ্রিস্টান মাজহাব ছিল। উজির প্রতিটি মাজহাবের ইমামের জন্য আলাদা আলাদা ধর্মীয় নিয়ম তৈরি করে। সে নিয়মগুলো একে অপরের সম্পূর্ণ বিপরীত। সব ইমামদের বলা হয় এই বিধান কাউকে না দেখাতে।
প্রত্যেকে ভাবল, তার কাছেই আসল নিয়ম আছে। ফলে এক ইমাম আরেক ইমামকে ভুল বলে দাবি করতে শুরু করে।
ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। একসময় এই ঝগড়া বড় দাঙ্গায় রূপ নেয়। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও রক্তক্ষয় হয়।
শেষে উজির আবার ১২ জন ইমামকে আলাদা করে বলে, "তোমাকেই আমি আমার উত্তরসূরি হিসেবে রেখে যাচ্ছি। অন্য ১১ জনকে তোমার কথা শুনতে হবে।"
এভাবে সে সবার মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়।
এরপর উজির নিজ দেশে ফিরে গিয়ে রাজার কাছে জানায়, "আপনার আর কষ্ট করে খ্রিস্টানদের দমন করতে হবে না। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করবে।"
এই ঘটনা আমাদের শেখায় বাইরের শত্রুর চেয়ে ভিতরের শত্রু অনেক ভয়ানক। বন্ধুর মুখোশ পরে কেউ যদি আপনার বিশ্বাস অর্জন করে, সে আপনার ভিতর থেকেই সবকিছু শেষ করে দিতে পারে। সেজন্য সবসময় সচেতন থাকা দরকার।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/w8G2bv8I13E?si=dU7oMT4SBMQencMX
এম.কে.