
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট—যিনি "ওমাহার ওরাকল" নামে পরিচিত—তার বিপুল সম্পদ গড়েছেন কঠোর শৃঙ্খলা এবং সুদৃঢ় নীতির মাধ্যমে। তার ধন-সম্পদ গঠনের দর্শন কোনো জটিল আর্থিক কৌশল কিংবা সময়ভিত্তিক বাজার পূর্বাভাসের ওপর নির্ভর করে না; বরং ব্যক্তিগত স্বনিয়ন্ত্রণ ও নিয়মতান্ত্রিক অভ্যাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই সাফল্য। নিচে তুলে ধরা হলো ওয়ারেন বাফেটের পাঁচটি স্বনিয়ন্ত্রণমূলক অর্থনৈতিক নীতি, যা যে কেউ নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন—
১. আগে নিজেকে অর্থ দিন: অটোমেটিক সেভিংস
"ব্যয় করে যা বাঁচে তা সঞ্চয় করো না, বরং সঞ্চয় করে যা থাকে তা ব্যয় করো।" – ওয়ারেন বাফেট
বাফেটের মতে, ধন-সম্পদ গঠনের মূল ভিত্তি হলো—ব্যয়ের আগে সঞ্চয়। অর্থাৎ নিজের ভবিষ্যতের জন্য আগে অর্থ সরিয়ে রাখা, তারপর বাকি অর্থ দিয়ে জীবনযাপন করা। মাস শেষে যা বাঁচে তা সঞ্চয়ের চিন্তা করলে সঞ্চয়ের সুযোগ প্রায় থাকেই না।
এই অভ্যাস গড়ে তোলা যায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অটোমেটিক ট্রান্সফার, এমপ্লয়ার ৪০১কে ম্যাচ সর্বাধিক ব্যবহার, এবং সঞ্চয়কে একটি অপরিহার্য ব্যয়ের অংশ হিসেবে গণ্য করার মাধ্যমে।
২. শুধু বোঝা যায় এমন বিনিয়োগে অর্থ ঢালুন
"ঝুঁকি আসে তখনই, যখন আপনি জানেন না আপনি কী করছেন।" – ওয়ারেন বাফেট
বাফেটের বিনিয়োগ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তার ‘সার্কেল অফ কম্পিটেন্স’ বা জ্ঞানের গণ্ডির মধ্যে থাকা। কোনো ব্যবসা বা খাতের সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে তাতে বিনিয়োগ করলে তা অনিবার্য ঝুঁকির জন্ম দেয়। ব্যবসার মডেল, প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা, আর্থিক স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বাফেটের পরামর্শ হলো—বিস্তৃত মার্কেট ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ, যা কম জ্ঞানের মধ্যেও বাজারে সুদীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল আয় দিতে পারে।
৩. দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন, ক্ষণিকের ওঠানামা উপেক্ষা করুন
"আমাদের প্রিয় হোল্ডিং পিরিয়ড হচ্ছে—চিরকাল।" – ওয়ারেন বাফেট
দ্রুত ফলাফল প্রত্যাশী সমাজে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ মানসিকভাবে কঠিন। তবে বাফেট দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী স্বনিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে দেখেন। বাজারের দৈনিক ওঠানামার পেছনে না ছুটে, ব্যবসার ভিত্তিগত মূল্য বৃদ্ধির ওপর ফোকাস করাই সঠিক কৌশল।
এটি মানসিক দৃঢ়তা, কর-সাশ্রয় এবং ধৈর্য দাবি করে। তবে ফলাফল হয় অধিক লাভজনক এবং নিরাপদ।
৪. ভিড়ের উল্টো পথে হাঁটুন, আবেগের সময় বিপরীত সিদ্ধান্ত নিন
"অন্যরা যখন লোভী হয়, তখন ভয় দেখাও; আর অন্যরা যখন ভয় পায়, তখন লোভ দেখাও।" – ওয়ারেন বাফেট
এই নীতি মানে হলো—মার্কেট যখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে তখন সতর্ক হওয়া এবং যখন সবাই আতঙ্কে বিক্রি করছে, তখন সুযোগ খোঁজা। বাফেট বলেন, আবেগের সময় একজন সফল বিনিয়োগকারীকে উল্টো সিদ্ধান্ত নিতে হয়—যা মানসিকভাবে খুব কঠিন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে লাভজনক।
এজন্য প্রস্তুতি ও নগদ অর্থ সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বাজার পতনের সময় আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন।
৫. নিয়মিত শিক্ষা নিন, অর্থনৈতিক জ্ঞান বাড়ান
"আপনি যত বেশি শিখবেন, তত বেশি আয় করতে পারবেন।" – ওয়ারেন বাফেট
বিনিয়োগে সাফল্যের জন্য ধারাবাহিক শিক্ষাকে বাফেট অপরিহার্য মনে করেন। তিনি তার সময়ের অধিকাংশই পড়া, বিশ্লেষণ ও শিখতে ব্যয় করেন। এটি শুধু বিনিয়োগ নয়, জীবনের সব দিকেই ফলদায়ক।
এ শিক্ষার মধ্যে পড়ে—অর্থনৈতিক নীতিমালা, বাজার বিশ্লেষণ, সফল বিনিয়োগকারীদের অভ্যাস, এবং নিজ ভুল থেকে শেখা। প্রতিদিন একটু একটু করে শেখা জ্ঞানের সুদ যেমন সময়ের সঙ্গে বাড়ে, ঠিক তেমনই বাড়ে বিনিয়োগের ফলও।
ওয়ারেন বাফেটের সাফল্যের রহস্য লুকিয়ে আছে এসব সহজ কিন্তু কঠিনভাবে অনুসরণযোগ্য স্বনিয়ন্ত্রণমূলক নীতির ভেতর।
এই পাঁচটি মূলনীতি হলো:
আগে নিজেকে অর্থ দিন
যা বোঝেন তা-তেই বিনিয়োগ করুন
দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করুন
বাজারের ভিড়ের উল্টো পথে হাঁটুন
প্রতিনিয়ত শিখে যান
এই নীতিগুলো অনুসরণ করতে কোনো উচ্চ ডিগ্রি, অভিজাত সংযোগ বা বিপুল অর্থের প্রয়োজন নেই। দরকার কেবল ধৈর্য, নিয়মিত চর্চা, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ। এই অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে আপনার সম্পদ গঠনকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাবে।
নোভা