
চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী এলাকায় সাঙ্গু নদীর তীরে পোড়ানো হচ্ছে বিষাক্ত ময়লা, ফলে দূষিত হচ্ছে আশপাশের এলাকা।
নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি। প্রায় ৫ থেকে ৬ শত পরিবারের বসবাস এ তীরে। নদীর নাব্য সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। অথচ নদীটি রক্ষায় নজরদারির কোনো ব্যবস্থা নেই।
জানা গেছে, একসময় এই নদীতে চলাচল করত বড় বড় নৌকা। কয়েক শ’ জেলের জীবিকা নির্বাহ হতো এই নদীতে মাছ ধরে। কিন্তু এখন সেই নদী মারাত্মকভাবে দূষিত। নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় ছোট-বড় কোনো মাছই আর নদীতে পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দইয়ের হাঁড়ি, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন ও সবজির আবর্জনা সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। একসময় এ নদীতে দেশি প্রজাতির নানা মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয় বাসিন্দারা দৈনন্দিন কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতেন।
কিন্তু এখন নিয়মিতভাবে আবর্জনা ফেলায় নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। ড্রেজিং না হওয়ায় নদী সরু হয়ে গেছে, পানির প্রবাহও কমে গেছে। আর মাছ তো প্রায় একেবারেই দেখা যায় না।
নদীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা মুফিজুর রহমান বলেন, পৌরসভার নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থান থাকলেও কিছু মানুষ নিয়ম না মেনে নদীতে আবর্জনা ফেলছে। এতে একদিকে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে মাছও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ৭-৮ বছর আগেও এই নদী থেকে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত, কিন্তু এখন আর তেমন কোনো মাছই নেই।
খাগরিয়ার বাসিন্দা আব্দুন সবুর বলেন, “কয়েক বছর আগেও আমরা হুইল দিয়ে সাঙ্গু নদীতে মাছ ধরতাম। প্রতিবার ৩-৪ কেজি করে মাছ ধরা পড়ত। এখন তো জাল ফেললেও পুঁটি মাছ পর্যন্ত ধরা পড়ে না। নদীর পানি এতটাই দূষিত হয়ে গেছে যে, মাছ আর বাঁচে না।”
স্থানীয় জেলেরা জানান, এই নদী থেকেই একসময় পাঁচজনের সংসার চলত। কিন্তু এখন সারাদিন জাল টানলেও মাছের দেখা মেলে না। অনেকেই বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে এখন অন্যের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করছেন। একজন দুঃখ করে বলেন, “এত বড় নদী এ এলাকায় আর নেই, অথচ এখন নদীতে মাছ নেই। সাঙ্গু নদী বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ও প্রাচীন নদী। কিন্তু এর সৌন্দর্য আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।”
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফ বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব আমরা এ সমস্যা বন্ধ করার উদ্যোগ নেব। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এভাবে নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণে শুধু মাছ নয়, জীববৈচিত্র্যেও মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।”
সজিব