
ছবি: সংগৃহীত।
বছরের পর বছর পাওনা টাকা চাইতে চাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন? ধার দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে হয়রান হচ্ছেন অথচ মিলছে না কোনও প্রতিকার? এই সমস্যা ভুক্তভোগীর সংখ্যা দেশে নেহাত কম নয়। তবে আইনের দৃষ্টিতে পাওনা টাকা ফেরত পাওয়া আপনার অধিকার—আর এই অধিকার আদায়ের রয়েছে কার্যকর উপায়।
আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আগে স্থানীয় সালিশ বা সামাজিক বিচার ব্যবস্থার দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে। গ্রাম বা পাড়া মহল্লায় অভিজ্ঞ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে সালিশের আয়োজন করে বিরোধ মীমাংসা করার প্রচলন বহু পুরনো। সালিশে দুই পক্ষ বসে লিখিতভাবে সমঝোতায় পৌঁছালে তা অনেক সময় মামলা-মোকদ্দমা ছাড়াই সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়। তবে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সালিশ অনেক সময় পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে—সেক্ষেত্রে আইনই হতে পারে শেষ ভরসা।
যদি সালিশে সমাধান না আসে, তবে আইনের দিকেই এগোতে হবে। পাওনা টাকা আদায়ে দুই ধরনের মামলার সুযোগ রয়েছে:
দেওয়ানী মামলা (মানি স্যুট): যদি কারও কাছে বড় অঙ্কের টাকা পাওনা থাকে এবং সেটি ফেরত না দেয়, তবে দেওয়ানী আদালতে ‘মানি স্যুট’ বা টাকা আদায়ের মামলা করা যায়। তবে মামলা দায়েরের সময় কোর্ট ফি জমা দিতে হয় যা দাবিকৃত টাকার পরিমাণের উপর নির্ভরশীল।
ফৌজদারি মামলা (প্রতারণা বা বিশ্বাসভঙ্গ): ধার নেওয়ার সময় প্রতারণা বা ইচ্ছাকৃত বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা থাকলে সেক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলার সুযোগ আছে। এ জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা সরাসরি আদালতে সিআর (ক্রিমিনাল কেস) বা নালিশি মামলা দায়ের করা যায়। অভিযোগ গ্রহণ করলে আদালত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
যদি কাউকে টাকা ধার দিতে হয়, তাহলে অবশ্যই লিখিত চুক্তি করে নেওয়া উচিত। ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্রে কেন ও কী পরিমাণ টাকা ধার দেওয়া হলো, কবে পরিশোধ করতে হবে—তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা উচিত। চুক্তিতে সাক্ষী রাখুন এবং প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারির মাধ্যমে অ্যাটেস্ট করে নিন। এই দলিল ভবিষ্যতে আইনি সহায়তার বড় প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
থানায় অভিযোগ জানালে তদন্ত কর্মকর্তা প্রমাণ যাচাই করে মামলা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন: রশিদ, বিকাশ/নগদ ট্রান্সফার রেকর্ড, চুক্তিপত্র, সাক্ষী—এসব প্রমাণ জমা দিতে হবে। আদালতে মামলা করতে হলে প্রথমে লিগাল নোটিশ পাঠানো উচিত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওনাদার টাকা ফেরত না দিলে আদালতে ‘মানি স্যুট’ মামলা দায়ের করা যায়।
যদি কোনো ব্যক্তি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ না করেন, তাহলে অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে মামলা করা হয়। বন্ধকী সম্পত্তির বিরুদ্ধে নিলাম দেওয়া বা আদালতের আদেশে দখল নেওয়ার সুযোগ থাকে।
কোনো কর্মচারী যদি নিয়োগদাতার কাছে বেতন বা মজুরি বকেয়া পায়, তবে তিনি যদি শ্রমিক শ্রেণির আওতায় পড়েন, তাহলে শ্রম আদালতে মামলা করতে পারেন। না হলে দেওয়ানী আদালতে মামলা করা সম্ভব।
আদালত পাওনা অর্থের পুরো টাকাই ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। এর সঙ্গে সুদ, মামলা পরিচালনার ব্যয় ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের রায়ও দিতে পারেন। ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তের জেল বা জরিমানার আদেশও হতে পারে।
পাওনা টাকা আদায় দীর্ঘসূত্রতা ও মানসিক চাপের কারণ হলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগে আপনি ন্যায্য পাওনা ফেরত পেতে পারেন। সালিশ থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত—সব পথেই প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে। তাই নিরাশ না হয়ে, দলিল-প্রমাণসহ উপযুক্ত আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে উদ্যোগ নিন আপনার পাওনা ফিরে পাওয়ার।
দ্রষ্টব্য: এ প্রতিবেদনটি সাধারণ তথ্যভিত্তিক। কোনো আইনগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন আইনজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মিরাজ খান