ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

জমির খতিয়ানে ভুল হলে আইনগত প্রতিকার পেতে কী করবেন?

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ১৮ জুন ২০২৫

জমির খতিয়ানে ভুল হলে আইনগত প্রতিকার পেতে কী করবেন?

ছ‌বি: প্রতীকী

জমির খতিয়ানে নামের বানানে ভুল, দাগ নম্বরে ভুল, অংশ লিখতে ভুল, অথবা জমির নামজারি অন্য কেউ করে নেওয়ার মতো নানা ভুল প্রায়ই দেখা যায়। আবার অনেক সময় মূল খতিয়ান হারিয়েও যায়। এসব সমস্যার আইনি সমাধান থাকলেও তা প্রক্রিয়াগতভাবে জটিল ও সময়সাপেক্ষ।

ভূমি মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ২৯ জুলাই এক গেজেট (রেকর্ড সংশোধন পরিপত্র নং ৩৪৩) প্রকাশ করে জানায়, খতিয়ানে ভুল থাকলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড বরাবর ‘মিস কেস’ আবেদন করে সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। এজন্য সাধারণ সাদা কাগজে আবেদন করে ২০ টাকার কোর্ট ফি দিতে হয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হয়।

যদি কেউ প্রতারণা করে আপনার নামে থাকা জমি নিজের নামে খারিজ করে নেয়, তাহলে এসিল্যান্ড মহোদয়ের কাছে একইভাবে মিস কেস দিয়ে বাতিলের আবেদন করা যায়। প্রয়োজনীয় শুনানি ও যাচাই শেষে তিনি পুরনো মালিকের নামে খতিয়ান ফিরিয়ে দিতে পারেন।

আবার যদি জমির খারিজ বা নামজারি খতিয়ানের মূল কপি হারিয়ে যায়, তাহলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হয়। সেই জিডির কপি এবং ২০ টাকার কোর্ট ফিসহ এসিল্যান্ড বরাবর আবেদন করলে, প্রমাণ মিললে নতুন খতিয়ানের আদেশ দেওয়া হয়। এরপর মাত্র ১০০ টাকা ফি দিয়ে আপনি নতুন খতিয়ান পেতে পারেন, যার জন্য ডিসিআর নামে একটি রশিদও দেওয়া হয়।

নামজারি ছাড়া অন্য জরিপের খতিয়ান যেমন এস.এ., সি.এস., আর.এস., বিএস ইত্যাদি যদি হারিয়ে যায়, তাহলে মৌজা নম্বর ও খতিয়ান নম্বর জানিয়ে জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমে আবেদন করে তা সংগ্রহ করা সম্ভব।

নামজারি সংশোধনের পুরো প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ দিন সময় নেয়। কারণ আবেদন পাওয়ার পর প্রথমে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রতিবেদন চাওয়া হয়, এরপর প্রতিবেদন এলে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে শুনানিতে ডাকা হয়। কোনো আপত্তি না থাকলে খতিয়ানের ভুল সংশোধনের আদেশ দেওয়া হয় এবং সংশোধিত খতিয়ান প্রস্তুত করে স্বাক্ষরপূর্বক আবেদনকারীকে হস্তান্তর করা হয়।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ১৯৫০ সালের স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট-এর ১৪৩ ধারা এবং ১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ২৩(৩) ধারা অনুযায়ী করণিক ভুল যেমন নাম, অংশ বা দাগের ভুল সংশোধন করেন। তবে জালিয়াতির মাধ্যমে করা ভুল সংশোধনের জন্য বিধিমালার ২৩(৪) ধারা অনুসারে তদন্ত ও শুনানির মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

তবে বাস্তবে অনেক সময় এসিল্যান্ড অফিস এসব সংশোধনের দায়িত্ব নিতে চায় না। নিয়মের ব্যাখ্যা দিয়ে অনেককেই আদালতের পথে যেতে বলা হয়। ফলে সাধারণ মানুষ যারা আইন জানেন না, তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ভুক্তভোগীদের দাবি, সরকার যেহেতু গেজেট প্রকাশ করে একটি সহজ আইনগত পদ্ধতি দেখিয়েছে, সেটি যেন সঠিকভাবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হয়। যাতে সাধারণ মানুষ আর ভূমি অফিসে গিয়ে বারবার হয়রানির শিকার না হন।

এম.কে.

×