
অবসর ভাবনা যতই ঘনিয়ে আসে, ততই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে “আমার সঞ্চয় কি যথেষ্ট?” বিশেষ করে যখন বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই, তখন ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও তীব্র হয়।
এক সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী মার্কিনিদের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখনও অবসরকালীন জীবনের জন্য তাঁদের বার্ষিক আয়ের তিনগুণের বেশি জমাতে পারেননি। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অবসর পরিকল্পনা প্রদানকারী সংস্থা ফিডেলিটি-এর মতে, যদি আপনি ৬৭ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার কথা ভাবেন, তবে ৫০ বছর বয়সেই বার্ষিক আয়ের অন্তত ছয়গুণ সঞ্চয় থাকা উচিত।
তবে এই ‘ছয়গুণ’ হিসাবই শেষ কথা নয়। অর্থনৈতিক পরিকল্পক নাথান সেবেস্তা বলেন, “সবাইকে এক ছাঁচে ফেলা যায় না। কারও জীবনধারা সাধাসিধে, কারও আবার একটু বেশি ব্যয়বহুল। তাই অবসরের জন্য সঞ্চয়ের অঙ্কটা একেক জনের জন্য একেক রকম।”
কে কখন অবসর নেবেন, কতদিন আয় ছাড়া চলতে হবে, কেমন জীবনযাপন করতে চান এসব বিষয় হিসাব করেই ঠিক করতে হবে সঞ্চয়ের পরিমাণ।
তাহলে কীভাবে জানবেন আপনি ঠিক পথে আছেন কি না?
নাথান বলেন, উল্টো পথে ভাবুন। প্রথমে ঠিক করুন অবসরে আপনি বছরে কত টাকা ব্যয় করবেন। তারপর সেটা গুণ করে হিসাব করুন কত বছর চলবে এই খরচ। এরপর মুদ্রাস্ফীতির কথা মাথায় রেখে হিসাবটা একটু বড় করুন। তাতেই বুঝে যাবেন, প্রতি বছর কতটা সঞ্চয় করতে হবে, আর আপনার বিনিয়োগ কতটা বাড়তে হবে সেই লক্ষ্য পূরণে।
পিছিয়ে থাকলেও দুশ্চিন্তা নয়, বরং নিন এই ৩টি সহজ পদক্ষেপ
১. সোশ্যাল সিকিউরিটি তাড়াহুড়ো করে তুলবেন না
মার্কিন নাগরিকরা চাইলে ৬২ বছরেই সোশ্যাল সিকিউরিটি সুবিধা নিতে পারেন। তবে এতে আপনি কম সুবিধা পাবেন। বরং যদি আপনি ৬৭ পেরিয়ে ৭০ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন, তাহলে আপনার মাসিক পেমেন্ট প্রায় ২৪ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। তাই সম্ভব হলে অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. ‘ক্যাচ-আপ কনট্রিবিউশন’-এর সুযোগ নিন
৫০ পেরোলেই আপনি অবসর পরিকল্পনায় বাড়তি জমা দিতে পারবেন। যেমন ৪০১(কে) বা ৪০৩(বি)-তে ২০২৫ সালে আপনি ২৩,৫০০ ডলারের বাইরে আরও ৭,৫০০ ডলার অতিরিক্ত রাখতে পারবেন, মোট ৩১,০০০ ডলার পর্যন্ত।
ব্যক্তিগত অবসর অ্যাকাউন্ট (IRA) এর ক্ষেত্রে ৭,০০০ ডলার পর্যন্ত জমা দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য অতিরিক্ত ১,০০০ ডলার রাখা যাবে।
এই বাড়তি সঞ্চয় শুধু ভবিষ্যতের ভরসা নয়, আয়করেও কিছুটা ছাড় পাওয়া যেতে পারে।
৩. জীবনযাত্রার মান একটু সরল করুন
সঞ্চয়ের ঘাটতি অনেক বেশি হলে, হয়তো জীবনধারার কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। সেবেস্তা বলেন, “জীবনটা হয়তো সেই স্বপ্নের মতো হবে না, কিন্তু খরচ কমালে, ঋণ পরিশোধে মন দিলে এবং একটু সস্তা জায়গায় থাকলে আপনি ভালোভাবেই অবসর কাটাতে পারবেন।”
সবশেষ বিকল্প? অবসরের পরেও কিছুদিন কাজ চালিয়ে যাওয়া। অনেকেই এটা ভাবেন না, কিন্তু সঞ্চয়ের ঘাটতি যদি বেশিই হয়, তবে এটাও হতে পারে বাস্তবসম্মত এক উপায়।
অবসর মানেই পাহাড়সম টার্গেট নয়। এটা একটা যাত্রা, যেখানে আপনাকে নিজের গতি, দিক ও লক্ষ্য বুঝে চলতে হবে। যদি পঞ্চাশ বছর বয়সেও মনে হয় আপনি পিছিয়ে পড়েছেন, দুশ্চিন্তা নয় এখনই সময় শুরু করার। ছোট ছোট পদক্ষেপেই তৈরি হতে পারে বড় এক নিরাপদ ভবিষ্যৎ।
সূত্র:https://tinyurl.com/35fpu98w
আফরোজা