ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

লিউকেমিয়া চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা: কেমোথেরাপি ছাড়াই যুগান্তকারী সাফল্য

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ১৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৪০, ১৮ জুন ২০২৫

লিউকেমিয়া চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা: কেমোথেরাপি ছাড়াই যুগান্তকারী সাফল্য

ছবি: সংগৃহীত

লিউকেমিয়া চিকিৎসায় কেমোথেরাপি ছাড়া কার্যকর পদ্ধতির সন্ধান পেয়েছে যুক্তরাজ্যজুড়ে পরিচালিত এক যুগান্তকারী ওষুধ পরীক্ষা। গবেষকদের মতে, এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক ‘মাইলফলক’ হিসেবে বিবেচিত হবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী রোগীদের অনেকের ক্ষেত্রেই প্রচলিত কেমোথেরাপির তুলনায় ফলাফল আরও ভালো পাওয়া গেছে।

লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘ফ্লেয়ার ট্রায়াল’

‘ফ্লেয়ার ট্রায়াল’ নামের এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে যুক্তরাজ্যের ৯৬টি ক্যান্সার কেন্দ্রে। এতে অংশগ্রহণ করেছেন ৭৮৬ জন এমন লিউকেমিয়া রোগী, যাদের আগে কখনও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এদের মধ্যে কিছু রোগীকে দেওয়া হয় প্রচলিত কেমোথেরাপি, কিছু রোগীকে কেবল ‘ইব্রুটিনিব’ নামের একটি লক্ষ্যনির্ভর ওষুধ, আর বাকিদের দেওয়া হয় দুটি ওষুধ—ইব্রুটিনিব এবং ভেনেটোক্ল্যাক্স—একসঙ্গে।

রোগীদের চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয় ব্যক্তিগত রক্ত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে, যা চিকিৎসায় ‘পারসোনালাইজড মেডিসিন’-এর নতুন যুগের ইঙ্গিত দেয়।

ফলাফল: পাঁচ বছর পর জীবনযাত্রা ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে সাফল্য

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ইব্রুটিনিব ও ভেনেটোক্ল্যাক্স যুগ্মভাবে গ্রহণ করেছেন, তাদের ৯৪ শতাংশ পাঁচ বছর পরও ক্যান্সার বাড়েনি এবং তারা জীবিত ছিলেন। একক ইব্রুটিনিব গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৭৯ শতাংশ, আর কেমোথেরাপি গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে মাত্র ৫৮ শতাংশ।

এছাড়া, দুই বছর চিকিৎসা শেষে যারা যৌথ ওষুধ নিয়েছেন, তাদের ৬৬ শতাংশের শরীরে বোন ম্যারোতে আর কোনো ক্যান্সারের অস্তিত্ব ছিল না। একক ওষুধ গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল শূন্য এবং কেমোথেরাপি গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে ৪৮ শতাংশ।

ওষুধ দুটি কীভাবে কাজ করে?

ইব্রুটিনিব একটি ‘ক্যান্সার গ্রোথ ব্লকার’—এটি ক্যান্সার কোষকে বিভাজিত ও বর্ধিত হতে বাধা দেয়। ভেনেটোক্ল্যাক্স কাজ করে একধরনের প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে, যা CLL (ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া) কোষে সক্রিয় থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যুগ্ম ওষুধ ব্যবস্থাটি কেমোথেরাপির তুলনায় রোগীরা সহজে সহ্য করতে পারেন।

গবেষকের মন্তব্য: রোগীবান্ধব চিকিৎসা এখন বাস্তব

লিডস টিচিং হসপিটালের পরামর্শক হেমাটোলজিস্ট এবং ফ্লেয়ার ট্রায়ালের প্রধান গবেষক ড. তালহা মুনির বলেন, ‘ফ্লেয়ার ট্রায়াল একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। কেমোথেরাপি ছাড়াই যে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়, সেটি আমরা প্রমাণ করেছি। রোগীর ক্যান্সারের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে ব্যক্তিকৃত চিকিৎসা দেওয়ার যুগে আমরা প্রবেশ করেছি।’

ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের মন্তব্য

এই গবেষণার অর্থায়ন করেছে ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে (যুক্তরাজ্য) এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি অ্যাবভি ও জনসন অ্যান্ড জনসন।

এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ড. ইয়ান ফোলকস বলেন, ‘ফ্লেয়ার ট্রায়ালের ফলাফল প্রমাণ করে, আমরা CLL (ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া) রোগীদের জন্য আরও সহনীয় ও নির্ভুল চিকিৎসা দিতে পারি, যা তাদের আপনজনদের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়।’

এই ট্রায়ালের সফলতা কেবল লিউকেমিয়া নয়, বরং ভবিষ্যতে অন্যান্য রক্তসংক্রান্ত ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির দুয়ার খুলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

 

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

রাকিব

×