
ছবি: সংগৃহীত
মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান বহুদিনের। এবার সেই প্রশ্ন ঘিরেই ফের শুরু হয়েছে উত্তেজনা। নাসার কিউরিওসিটি রোভারের তোলা এক ছবিতে রহস্যময় ‘মাশরুম’ সদৃশ একটি বস্তু দেখা গেছে, যা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক ও কৌতূহল।
২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে এই ছবিটি তোলে। প্রায় এক দশক পর এই ছবি খুঁজে পান ইউএফও শিকারি স্কট ওয়ারিং। তার দাবি—‘ছবিতে দেখা বস্তুটি ঠিক যেন পৃথিবীর মাশরুমের মতো। এর গোড়ার অংশটি বাঁকানো, যেমনটা আমাদের পরিচিত ছত্রাকে দেখা যায়। নাসা কীভাবে এমন কিছু নজর এড়িয়ে যেতে পারে, সেটাই আশ্চর্যের।’
এ ঘটনার পর অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন—‘মঙ্গলে জীবনের সন্ধান মিলেছে!’ কেউ লিখেছেন, ‘এটা তো স্পষ্ট মাশরুমের মতো দেখাচ্ছে। নাসা আসলে মঙ্গলের অনেক তথ্য গোপন করে যাচ্ছে।’
কিন্তু বিজ্ঞানীরা এমন দাবিকে একেবারেই আমলে নিচ্ছেন না। ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহামের প্ল্যানেটারি ফিজিসিস্ট ড. গ্যারেথ ডোরিয়ান জানান, ছবিতে যেটিকে মাশরুম ভাবা হচ্ছে, সেটি আসলে দুইটি পাথরের প্রাকৃতিক বিন্যাস। তার মতে, হয়তো একটি পাথর ছিল মাটির নিচে, অন্যটি উপরে। সময়ের সঙ্গে বাতাস ধুলো সরিয়ে উপরের পাথরটি নিচেরটির উপর স্থির হয়ে গেছে। পৃথিবীতেও এমন বহু অদ্ভুত পাথরের গঠন দেখা যায়, বিশেষ করে মরুভূমিতে।
এছাড়া, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি হতে পারে ‘কনক্রিশন’ নামের একটি ভূতাত্ত্বিক গঠন, যা বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গলে তরল পানি প্রবাহের ফলে তৈরি হয়েছিল। এই ধরণের পাথর তাদের চারপাশের অপেক্ষাকৃত নরম শিলাকে ক্ষয় করে রেখে দেয় ছাতা আকৃতির ‘মাশরুম’-এর মতো অবয়ব।
নাসার কিউরিওসিটি রোভার মূলত মঙ্গলে অতীত বা বর্তমানের মাইক্রোস্কোপিক জীবনের প্রমাণ খোঁজার জন্যই ২০১১ সালে পাঠানো হয়। এতে রয়েছে ক্যামেরা, রক ড্রিলিং সিস্টেম, কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস টুল ইত্যাদি। কিন্তু এত বছরেও প্রাণের কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ মেলেনি।
ড. ডোরিয়ান আরও বলেন, ‘মঙ্গলের আবহাওয়া এতটাই কঠিন যে সেখানে মাটির উপর জীবনের অস্তিত্ব অসম্ভব।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, মঙ্গলের পৃষ্ঠে চাপ পৃথিবীর ২০ মাইল ওপরের পরিবেশের মতো—যেখানে অতিমাত্রায় অতিবেগুনি রশ্মি ও কসমিক রশ্মি এসে পড়ে, যা ডিএনএ-র মতো জটিল অণুগুলোকে দ্রুত ধ্বংস করে দেয়।
এছাড়া তাপমাত্রার তারতম্যও ভয়ংকর—দিনের বেলায় যেখানে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি উঠতে পারে, রাতের বেলা তা নেমে যায় -১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ‘এই ধরনের চরম ঠাণ্ডা, বিকিরণ এবং নিম্নচাপের পরিবেশে কোনো পরিচিত জীবই টিকে থাকতে পারে না—এমনকি ছত্রাকও নয়’, বলেন ড. ডোরিয়ান।
তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, যদি মঙ্গলে কোথাও প্রাণ থেকে থাকে, তবে তা হয়তো মাটির গভীরে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে লুকিয়ে রয়েছে—যেখানে তীব্র বিকিরণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
সব মিলিয়ে, নাসার তোলা ওই ছবিটি সম্ভবত একটি প্রাকৃতিক পাথরের গঠন ছাড়া কিছুই নয়। তবুও, এমন ছবি ঘিরে মানুষের কল্পনা ছুটে যায় অন্য গ্রহে প্রাণ খোঁজার রোমাঞ্চকর সম্ভাবনার দিকে।
সূত্র: ডেইলি মেইল।
রাকিব