ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

কাউনিয়ায় ৩০ হাজার মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো

মঞ্জুরুল আহসান শামীম, কাউনিয়া, রংপুর

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ১৮ জুন ২০২৫

কাউনিয়ায় ৩০ হাজার মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো

ছবিঃ সংগৃহীত

কাউনিয়ার হারাগাছ ইউনিয়নের পূর্ব নাজিরদহ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মরা তিস্তা নদীর উপর সেতু না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলাচল করছে পাঁচ গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। বর্ষাকালে ছোট নৌকায় নদী পারাপার হতে গিয়ে কয়েকবার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। দুর্ভোগ কমাতে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

প্রায় ১৫ বছর আগে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হয় বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে এলাকার লোকজন একত্রিত হয়ে বাঁশ-কাঠ ও অর্থ সংগ্রহ করে মেরামত করে যাতায়াতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সাঁকোটি খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রতিবছরই মেরামতে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হারাগাছের চরাঞ্চলের পাঁচ গ্রামের মানুষের দুঃখ মরা তিস্তার শাখা নদীটি। হারাগাছ পৌরসভাসহ চার ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে গিয়ে মিলিত হয়েছে এই শাখা নদী। নৌকা আর বাঁশের সাঁকোই এলাকাবাসীর ভরসা। ভোটের আগে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ ও পাভেল জানান, কথা দিয়ে কেউ কথা রাখে না। নদীর ওপারে দুটি বাজার, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসা রয়েছে। সেতু না থাকায় সাধারণ মানুষ ও স্কুলপড়ুয়া শিশুদের যাতায়াতে চরম বিপাকে পড়তে হয়।

খলিলুর রহমান জানান, সেতু না থাকায় পার্শ্ববর্তী চিনাতুলি, ঠিকানার হাট, পূর্ব নাজিরদহ, বল্লভবিষ্ণু গ্রামের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উপজেলা সদরে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এ গ্রামগুলোতে আলু, ভুট্টা, ধান, পাট, গম, মরিচ, বাদামসহ নানা ধরনের সবজি উৎপাদন হয়। এসব কৃষিপণ্য হাট-বাজারে নিতে হলে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়, অথচ পূর্ব নাজিরদহ ঘাটে সেতু নির্মাণ হলে অর্ধেক পথ কমে আসবে। সেই সঙ্গে এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে।

পূর্ব নাজিরদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক লাল জানান, সেতু না থাকায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। বিদ্যালয়গামী ছাত্রছাত্রীরা জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে তাদের খুব কষ্ট হয়। সবাই বলে নতুন সাঁকো হবে, কিন্তু হয় না! আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না।

হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ জানান, সাঁকোটি পরিষদের বরাদ্দ থেকে সংস্কার করা হয়েছে। পাকা সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়ে বহুবার বলেছি। আশা করছি, নতুন সরকার আসলে পাকা সেতু হবে। পাকা সেতু হলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এর সুফল পাবেন।

উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সরেজমিনে দেখে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। এলাকাবাসী এর দ্রুত সমাধান চায়।

ইমরান

×