ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

এবার মানসিক চাপ মাপবে প্রযুক্তি! সতর্কবার্তা জানাবে ই-ট্যাটু

প্রকাশিত: ১৫:১১, ১৮ জুন ২০২৫

এবার মানসিক চাপ মাপবে প্রযুক্তি! সতর্কবার্তা জানাবে ই-ট্যাটু

ছবি: সংগৃহীত

যখন জটিল গাণিতিক হিসাব করেন বা কাগজে কিছু লিখবেন ভাবছেন, তখন অনিচ্ছাকৃতভাবে কপাল ভাঁজ পড়ে যায়। এই শারীরিক প্রতিক্রিয়াকেই এখন কাজে লাগাতে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তারা তৈরি করেছেন এক ধরনের ‘ই-ট্যাটু’—একটি হালকা, নমনীয় ও তারবিহীন ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা কপালে লাগানো হয় এবং এটি মানসিক চাপ বা ক্লান্তির মাত্রা পরিমাপ করতে পারে।

গবেষকদের মতে, এই ইলেকট্রনিক ট্যাটু বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে বিমানচালক, চিকিৎসক বা যেসব পেশায় এক মুহূর্তের ভুল প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, তাদের জন্য।

‘রিয়েল-টাইম ওয়ার্কলোড অ্যালার্ট’ দিতে পারবে ট্যাটু

গবেষণার অন্যতম গবেষক, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. নানশু লু জানান, ‘আমরা এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করতে চাই যা রিয়েল টাইমে মানসিক ক্লান্তি মেপে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করতে পারবে। তখন তারা চাইলে কিছু দায়িত্ব সহকর্মী বা এআই সিস্টেমের ওপর ছেড়ে দিতে পারবে।’

এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক সাময়িকী Device-এ।

পুরনো পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নতুন প্রযুক্তি

বর্তমানে মানসিক চাপ মাপতে প্রথাগত EEG (ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি) ও EOG (ইলেকট্রোওকুলোগ্রাফি) পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যা তারযুক্ত, ভারী এবং চলাফেরার সময় ভুল ফল দিতে পারে। অন্যদিকে, এই নতুন ই-ট্যাটু একেবারেই হালকা, নমনীয় ও তারবিহীন।

ডিভাইসটিতে গ্রাফাইটভিত্তিক পরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি চারটি EEG ইলেকট্রোড কপালের বিভিন্ন স্থানে এবং চোখের চারপাশে স্থাপন করা EOG ইলেকট্রোডের মাধ্যমে চোখের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। কানের পেছনে থাকে একটি রেফারেন্স ইলেকট্রোড।

ডিভাইসটি কন্ডাকটিভ টেপ দিয়ে একটি ছোট রিচার্জেবল সার্কিট বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং এতে একটি হালকা ব্যাটারি সংযুক্ত করা যায়।

পরীক্ষায় সফল ফলাফল

গবেষকরা ছয়জন অংশগ্রহণকারীর ওপর একটি নিরীক্ষা চালান। তাদের একটি স্ক্রিনে একে একে ২০টি করে অক্ষর দেখানো হয়। একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের (০ থেকে ৩ পর্যন্ত) আগের অক্ষরের সঙ্গে মিল থাকলে মাউস ক্লিক করতে বলা হয়।

যখন কাজটি কঠিন হয়, তখন অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ ও চোখের গতির ধরনে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়—যা মানসিক চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

এই তথ্যগুলো একটি মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমে প্রবেশ করানো হয় এবং দেখা যায়, এই অ্যালগরিদম নির্ভরযোগ্যভাবে ব্যবহারকারীর মানসিক চাপের মাত্রা পূর্বাভাস দিতে পারে।

মূল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সম্পূর্ণ ডিভাইসের (চিপ ও ব্যাটারিসহ) সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ২০০ মার্কিন ডলার এর নিচে। ভবিষ্যতে একটি অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে রিয়েল টাইমে ‘ওয়ার্কলোড অ্যালার্ট’ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে ড. লু সতর্ক করে বলেন, ‘সবসময় কাজ কমিয়ে আনা সমাধান নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অপটিমাল পারফরম্যান্স ঘটে তখনই যখন কাজের চাপ খুব বেশি নয়, আবার খুব কমও নয়। বেশি চাপ বিপজ্জনক হলেও, অতিরিক্ত সহজ কাজ একঘেয়েমি ডেকে আনে এবং মনোযোগ হারিয়ে যায়।’

 

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

রাকিব

×