ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

পুরুষ ডিএনএ থেকেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১৮ জুন ২০২৫

পুরুষ ডিএনএ থেকেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা!

ছবি: সংগৃহীত

একটি ছোট গবেষক দল প্রথমবারের মতো এমন একটি ইঁদুরের জন্ম দিয়েছে ও প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত লালন করেছে যার দুইটি জিনই এসেছে পুরুষ অভিভাবকদের কাছ থেকে। এই যুগান্তকারী সাফল্যে বিজ্ঞানীরা জেনেটিক ‘ইমপ্রিন্টিং’ নামক জিন নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় বড় এক বাধা পেরিয়েছেন, যা সাধারণত শুধু পিতৃ-ডিএনএ থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম হওয়াকে আটকায়।

জিন ইমপ্রিন্টিং হলো এমন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যেখানে কিছু নির্দিষ্ট জিন কেবল পিতা বা মাতার দিক থেকে পাওয়া হলে সক্রিয় হয়। সাধারণত পিতা বা মাতার উভয়ের ডিএনএ মিলে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করে, যার ফলে একটি সুস্থ ভ্রূণ জন্মায়। কিন্তু শুধুমাত্র পুরুষ ডিএনএ ব্যবহার করলে এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং ভ্রূণের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

চীনের একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর বিজ্ঞানী ও গবেষণা নেতৃত্বদানকারী ওয়েই লি এবং কুই ঝৌ-এর নেতৃত্বে গবেষকরা নির্দিষ্ট কিছু জিনে সম্পাদনা করে এই বাধা কাটিয়ে উঠেন। তারা দেখান, যদি কিছু নির্দিষ্ট ‘ইমপ্রিন্টেড’ জিনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে দুই পুরুষের ক্রোমোজোম দিয়েও একটি সুস্থ ইঁদুরের জন্ম ও পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব।

এই গবেষণার সবচেয়ে বড় আশার কথা হলো—এটি এমন কিছু জিনঘটিত রোগের চিকিৎসার পথ দেখাতে পারে, যেগুলো হয় “ইমপ্রিন্টিং” নামক জিন-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় ভুলের কারণে।

আমাদের শরীরে অনেক জিন থাকে, যেগুলো কেবল মা বা বাবা, যিনি জিনটি দিয়েছেন, তার দিক থেকে এলেই কাজ করে। এই নির্দিষ্টভাবে কাজ করার নিয়মকেই বলে জিন ইমপ্রিন্টিং। কিন্তু যদি এই প্রক্রিয়ায় কোনো গোলমাল হয়, তাহলে শরীরে নানা রকম রোগ দেখা দিতে পারে।

একটি উদাহরণ হলো Birk-Barel syndrome—এটি একটি খুবই বিরল এবং জটিল জেনেটিক রোগ। এই রোগের মূল কারণ একটি নির্দিষ্ট জিন, যার নাম KCNK9। এই জিনে যদি ইমপ্রিন্টিংয়ের ভুল হয়, তাহলে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুর কথা বলতে সমস্যা হয়, পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়।

এই নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, কীভাবে ইমপ্রিন্টিং জিনে জেনেটিক সম্পাদনা (gene editing) করে সমস্যার সমাধান করা যায়। এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে KCNK9 এর মতো জিনে ইমপ্রিন্টিং ত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

যদিও এখনই এই চিকিৎসা মানুষের ওপর প্রয়োগ হচ্ছে না, তবে ইঁদুরের ওপর এই গবেষণার সফলতা ভবিষ্যতে মানুষকে এমন রোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার পথে এক বড় সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।

গবেষকরা দেখেছেন, জিনগতভাবে সম্পাদিত স্টেম সেলগুলো সাধারণ স্টেম সেলের তুলনায় দ্বিগুণ দক্ষতায় পূর্ণবিকশিত ইঁদুরে পরিণত হয়েছে। এটি ভবিষ্যতের ক্লোনিং ও পুনঃজীবনশীল কোষ তৈরির ক্ষেত্রে বিপ্লবী উন্নয়ন হতে পারে।

এ ধরনের জিন সম্পাদনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মানব প্রজননে জেনেটিক হেরফের এখনো নিষিদ্ধ, কারণ এটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বিজ্ঞানীরা এখন কেবল প্রাণীর মডেলে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে মানব রোগ চিকিৎসায় পথপ্রদর্শক হতে পারে।

মুমু ২

×