
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবার খরচ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে বয়স্ক জনগোষ্ঠীও ‘এজ ইন প্লেস’—অর্থাৎ নিজেদের বাড়িতে থেকেই বার্ধক্য পার করার প্রবণতায় ঝুঁকছে। এই চাহিদাকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথে হাঁটছে দক্ষিণ কোরীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষে থাকা এই কোম্পানি এবার স্মার্টওয়াচের ক্ষেত্রেও অ্যাপলকে টেক্কা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
স্যামসাংয়ের মোবাইল বিভাগের ডিজিটাল হেলথ ইউনিটের প্রধান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. হোন পাক সিএনএন-কে বলেন, “বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা বাড়ছে এবং চিকিৎসার খরচও বাড়ছে। এ কারণে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিজের ঘরেই পেতে চাইছে—যেখানে আমরা আগে থেকেই উপস্থিত।"
স্মার্টফোন থেকে স্বাস্থ্যসেবা: স্যামসাংয়ের দখলে ঘর, এবার মনোযোগ শরীরের দিকে
অ্যাপল ওয়াচ বর্তমানে স্মার্টওয়াচ বাজারে শীর্ষে, IDC-এর তথ্য অনুযায়ী তাদের দখলে রয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ বাজার, যেখানে স্যামসাংয়ের অংশ মাত্র ৬ শতাংশ। তবে ঘরে বসে প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্যামসাংয়ের রয়েছে বাড়তি সুবিধা, কারণ কোম্পানিটি টিভি, ফ্রিজ ও অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্সের মাধ্যমে আগে থেকেই লাখো ঘরে রয়েছে।
স্মার্টওয়াচের নতুন আপডেটে যে ফিচারটি সবচেয়ে আলোচিত, তা হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। ঘড়ির সেন্সর ত্বকে আলো ফেলে ব্যবহারকারীর শরীরে বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ অনুমান করতে পারবে। বিটা ক্যারোটিন মূলত গাজর, মিষ্টি আলু, পালং শাকের মতো সবজিতে পাওয়া যায়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এই ফিচার ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীকে ঘড়িটি খুলে পিছনের সেন্সরে আঙুল রাখতে হবে। এটি সবজি খাওয়ার পরিমাণ নয়, বরং শরীরে পুষ্টি আছে কিনা—তা জানাবে। পাক জানান, এই প্রযুক্তিটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে গেছে।
ঘুম থেকে দৌড়: স্মার্ট লাইফস্টাইল গড়ার সহযাত্রী
নতুন আপডেটে থাকছে ঘুমের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক পরামর্শ, আর ‘রানিং কোচ’ নামের একটি ভার্চুয়াল প্রশিক্ষক, যা ব্যক্তিগত লক্ষ্য অনুযায়ী দৌড়ের ট্রেনিং প্ল্যান তৈরি করবে।
অ্যাপল ইতোমধ্যে তাদের ‘ওয়ার্কআউট বাডি’ চালু করেছে, যা এ আই কোচিং সেবা দেয়। স্যামসাংও তাদের নিজস্ব AI-ভিত্তিক হেলথ চ্যাটবট নিয়ে কাজ করছে, যদিও এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি।
ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের প্রযুক্তি: স্মার্টগ্লাস ও প্লেট স্ক্যানার!
স্যামসাংয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আছে স্মার্টগ্লাস—যা খাবারের ছবি দেখে খাবারে অ্যালার্জেন আছে কিনা বা আপনি খুব দ্রুত খাচ্ছেন কিনা, তা শনাক্ত করতে পারবে। ড. পাক বলেন, “প্রযুক্তি এখন সবই পারে। এখন কেবল দরকার সেটিকে সঠিকভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা।”
ChatGPT ও গুগল জেমিনির মতো মডেল ব্যবহার করে খাবারের ছবি বিশ্লেষণ করে পুষ্টিগুণ জানিয়ে দিচ্ছে, এমন সেবাও তৈরি হয়ে গেছে।
আইফোন ব্যবহারকারীরা বাদ?
স্যামসাংয়ের স্মার্টওয়াচগুলো বর্তমানে আইফোনের সঙ্গে কাজ করে না, যা কোম্পানিটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ড. পাক বলেন, অ্যাপলের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। “নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে, তবে এখনো কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।”
সংক্ষেপে স্যামসাং স্মার্টওয়াচ আপডেটের নতুন ফিচারগুলো:
1. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লেভেল চেকিং (বিটা ক্যারোটিন)
2. ঘুমের জন্য AI নির্ভর পরামর্শ
3. রানিং কোচ ও ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ
4. ভবিষ্যতে আসছে AI হেলথ চ্যাটবট
5. স্মার্টগ্লাসে খাবার বিশ্লেষণ প্রযুক্তি
6. এখনো আইফোনে কম্প্যাটিবল নয়
স্যামসাংয়ের পরিকল্পনা দেখে বোঝা যায়, তারা শুধুমাত্র ফিটনেস ট্র্যাকিং-এ থেমে থাকতে চায় না। বরং পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হতে চায়—যেখানে রোগ হওয়ার আগেই তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। আর এই লক্ষ্যেই তারা বাড়ির ভেতরে থাকা প্রতিটি ডিভাইসকে স্বাস্থ্যসেবার অংশ করতে চায়। অ্যাপল এই দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও, স্যামসাং এখন প্রতিযোগিতার মাঠে নতুন উদ্যমে নামছে—একটি স্বাস্থ্যবান ভবিষ্যতের প্রত্যাশায়।
Mily