
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব মহাসাগরের পানিতে শত শত নতুন আকারে বেশ বড় ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন মেরিন বায়োলজিস্ট ও ভাইরোলজিস্টরা, আগে কখনও দেখা যায়নি। মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী বেনজামিন মিন্চ এবং ভাইরোলজিস্ট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় উন্নত কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে সাগরের পানির নমুনা বিশ্লেষণ করে মাইক্রোবিয়াল জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ছিল ২৩০টি বিশালাকৃতির ভাইরাস, যা আগের কোনো গবেষণায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গবেষণার ফলাফল মহাসাগরীয় বাস্তুতন্ত্র বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত ভাইরাসগুলো কীভাবে ক্ষুদ্রাকৃতির সামুদ্রিক জীব ‘প্রোটিস্ট’দের জীবনচক্রে ভূমিকা পালন করে তা স্পষ্ট করতে সহায়ক। এই প্রোটিস্টগুলোর মধ্যে রয়েছে শৈবাল, অ্যামিবা ও ফ্ল্যাজেলেটস, যেগুলো সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খল ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য।
‘Expansion of the Genomic and Functional Diversity of Global Ocean Giant Viruses’ শীর্ষক গবেষণাটি ২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল নেচার জার্নালের ‘npj Viruses’ বিভাগে প্রকাশিত হয়। এতে বহু নতুন ভাইরাস জিনোমের সন্ধান পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে, যা বিশ্বের মহাসাগরের ভাইরাল বৈচিত্র্যের জ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গবেষণায় মোট ৫৩০টি নতুন কার্যকর প্রোটিন সনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৯টি ফটোসিন্থেসিসে অংশগ্রহণকারী প্রোটিন, যা নির্দেশ করে ভাইরাসগুলো হয়তো সংক্রমণের সময় তাদের ‘হোস্ট’ এবং ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
গবেষণাকদলের একজন, মেরিন বায়োলজি ও ইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিশাল ভাইরাসগুলোর বৈচিত্র্য ও মহাসাগরের শৈবাল ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জীবের সাথে তাদের সম্পর্ক বুঝতে পারলে আমরা ক্ষতিকর শৈবাল (Harmful Algal Blooms) সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে এবং নিয়ন্ত্রণ করার পথ খুঁজে পেতে পারি, যা ফ্লোরিডাসহ সারা বিশ্বে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ভাইরাস অনেক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন (জলজ বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মূলত এককোষী এবং অণুজীব দ্বারা গঠিত)-এর মৃত্যুর প্রধান কারণ, যা মহাসাগরের খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তি ও খাদ্য সরবরাহের উৎস। এসব ভাইরাসে পাওয়া নতুন কার্যকলাপ বায়োটেকনোলজির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এদের মধ্যে কিছু নতুন ধরনের এনজাইম থাকতে পারে।’
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্বে বায়োইনফরমেটিক সীমাবদ্ধতার কারণে এই বিশাল ভাইরাসগুলো সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে গবেষকরা নতুন একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, যার নাম BEREN (Bioinformatic tool for Eukaryotic virus Recovery from Environmental metageNomes), যা বৃহৎ ডিএনএ সিকোয়েন্সিং ডেটাসেট থেকে বিশাল ভাইরাসের জিনোম শনাক্ত করতে সক্ষম।
বেনজামিন মিন্চ বলেন, ‘আমরা আবিষ্কার করেছি যে বিশাল ভাইরাসগুলো এমন জিন বহন করে যা কার্বন বিপাক এবং ফটোসিন্থেসিসের মতো কোষীয় কার্যকলাপে অংশ নেয়, যা সাধারণত শুধুমাত্র কোষবিশিষ্ট জীবদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এর মানে এই যে ভাইরাসগুলো সংক্রমণের সময় তাদের হোস্টের বিপাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং সামুদ্রিক জীবরসায়নে প্রভাব ফেলে।’
গবেষকরা মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রস্ট ইনস্টিটিউট ফর ডেটা সায়েন্স অ্যান্ড কম্পিউটিং-এ (IDSC) পেগাসাস ব্যবহার করে গিগাবাইটের অধিক ডেটাসেট বিশ্লেষণ করেছেন, যার ফলে শত শত মাইক্রোবিয়াল সম্প্রদায়ের জেনোম পুনর্গঠন সম্ভব হয়।
বেনজামিন মিন্চ আরও বলেন, ‘এই গবেষণায় আমরা নতুন ভাইরাস সনাক্তকরণের জন্য উন্নত পদ্ধতি তৈরির ভিত্তি স্থাপন করেছি, যা দূষণ ও রোগজীবাণু পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব