ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

সমুদ্র বাণিজ্যে অস্থিরতা

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ১৭ জুন ২০২৫

সমুদ্র বাণিজ্যে অস্থিরতা

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাতের চতুর্থ দিনে হামলা পাল্টাহামলার ব্যাপকতা বেড়েছে কয়েকগুণ। ইসরাইলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র দুটি যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছে সেখানে। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মাণ হয় যে, এই দুই দেশের যুদ্ধ ও সংঘাত আরও প্রলম্বিত হতে পারে। দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাসহ যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়েও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। জাতিসংঘ মহাসচিব দুই দেশকে সর্বোচ্চ সংযত আচরণ করার কথা বললেও এর আদৌ কোনো প্রভাব নেই। এমতাবস্থায় বিশ্ববাজারে ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম। এর মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ ডলার। এখন অপরিশোধিত প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৭৮ দশমিক ৬৫ ডলার। এটি গত জানুয়ারি মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এর অনিবার্য প্রভাব পড়বে জ্বালানি তেলের দামে। এর ফলে তেলের দাম বাড়বে বাংলাদেশেও। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে হরমুজ প্রণালি দিয়ে জ্বালানি তেল ও পোশাক আমদানি-রপ্তানি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সমুদ্র বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ওপর চাপ তৈরি করতে ইরান হরমুজ প্রণালিতে এক ধরনের অঘোষিত অবরোধ আরোপ করতে পারে। কারণ ২০২৪ সালের এপ্রিলে উত্তেজনা চলাকালে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী হরমুজ প্রণালির কাছ থেকে ‘এমএসসি এরিয়াস’ নামে একটি কন্টেনার জাহাজ আটক করে ইরানের জলসীমায় নিয়ে যায়। জাহাজটি ছিল ইসরাইলের জোডিয়াক মেরিটাইমের সঙ্গে সংযুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোরটাল শিপিংয়ের মালিকানাধীন। 
বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেলের জোগান এবং এক-তৃতীয়াংশ প্রাকৃতিক গ্যাস এই পথ দিয়ে পরিবহন করা হয়। হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ পাঠাতে ইচ্ছুক নয় তেলবাহী  ট্যাঙ্কার কোম্পানি ফ্রন্টলাইন। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ অনেক দূর ঘুরে বিকল্প পথে আসতে হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে পণ্য পরিবহন খরচ। বাংলাদেশে এই খরচ বাড়বে ব্যাপকহারে। কারণ বাংলাদেশের পোশাক পণ্য সমুদ্রপথে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যায় হরমুজ প্রণালি ধরে। ফলে সেসব দেশে পণ্য পাঠাতে হিমশিম খাবেন গার্মেন্ট মালিকরা। সংকুচিত হবে মধ্যপ্রাচ্য দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যও। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। সে অবস্থায় হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে। এর পাশাপাশি বাড়বে তেলের দাম। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বিবেচনায় এনে প্রতিমাসে সমন্বয় করে থাকে তেলের দাম। সে অবস্থায় যত দ্রুত ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের অবসান ঘটে অথবা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকর হয়, বাংলাদেশের জন্য ততই মঙ্গল। তাতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিকারকসহ দেশের মানুষ স্বস্তি পেতে পারেন।

প্যানেল

×