ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

২০০ বছরেও স্বাদ কমেনি মুক্তাগাছার মণ্ডা’র

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১৭ জুন ২০২৫

২০০ বছরেও স্বাদ কমেনি মুক্তাগাছার মণ্ডা’র

যে খায় সেও প্রস্তায়, যে না খায় সেও প্রস্তায় ময়মনসিংহের ঐতিহ্য মুক্তাগাছার মণ্ডা। ময়মনসিংহের ইতিহাসে সমাদৃত ২০০'শত বছর পূর্বে ততকালীন জমিদারি শাসন-আমলে এক দরবেশ স্বাধু সন্ন্যাসীর হাতের ছুঁয়ায় তৈরি হয় মুক্তাগাছার মণ্ডা। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুক্তাগাছার তৎকালীন জমিদার শ্রী শ্রী শশিকান্ত মহারাজ রাজকীয় ভোজনে বিভিন্ন জমিদার ও রাজা বাদশাদেরকে মুক্তাগাছার মণ্ডা দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। দুইশত বছর পরেও সুপ্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন হিসেবে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভোজন বিলাসীদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে মুক্তাগাছার মণ্ডা। জনৈক দরবেশ বাবার হাতেই প্রথম বানানো হয় মুক্তাগাছার মণ্ডা, কেবল একটি মিষ্টি নয়, মুক্তাগাছার মণ্ডা এক ঐতিহ্যের নাম। যা স্বাদের পাশাপাশি টিকিয়ে রেখেছে সংস্কৃতিও। স্বপ্নে সাধুর শেখানো পদ্ধতিতেই ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার নাম শুনলেই মনে পরে যায় মণ্ডার নামের কথা। 

বর্তমানে মণ্ডার সুখ্যাতি শোনেননি এমন মানুষ বোধ হয় কম পাওয়া যায়। বর্তমানে মানুষেরা মণ্ডার নাম শুনে দেরি করেন না। কিনে নেন সুস্বাদু এই মিষ্টাণ্ড মণ্ডা। গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মুক্তাগাছার মন্ডা ২৬ তম জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ পূজাপার্বণ ও পারিবারিক প্রয়োজনেও জমিদার বাড়িতে প্রচুর মিষ্টান্নের প্রয়োজন হতো। সেই প্রয়োজনের সূত্র ধরেই তৈরি হয় মণ্ডা।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটী গ্রামের নিবাসী শ্রী গোপাল পাল ১৮২৪ সালের এই মণ্ডা প্রস্তুত করেন তিনি। এই মিষ্টি তৈরি করে মুক্তাগাছার জমিদারদের এক জন মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর কাছে পেশ করেন। বর্তমানে গোপাল পাল পরিবারের পঞ্চম বংশধর শ্রী রামেন্দ্রনাথ পাল ভ্রাতৃদ্বয় এই মিষ্টির ব্যবসা পরিচালনা করেন।

মণ্ডা তৈরির প্রধান উপকরণ দুধের ছানা ও চিনি। বর্তমানে পাল বংশীয় ৫.ম পুরুষেরা এই ব্যবসায় জড়িত। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মিষ্টির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। মিষ্টির নাম বলতেই ২০০ বছরের ইতিহাস সেই মুক্তাগাছার মণ্ডার নাম চলে আসে। মণ্ডার খ্যাতি ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে।

ময়মনসিংহ শহর থেকে ১৬ কিঃ মিঃ দূরে জমিদারদের রেখে যাওয়া স্মৃতি বিজড়িত শহর মুক্তাগাছা। মুক্তাগাছার চৌরঙ্গি মোড় এলাকায় এই মণ্ডার দোকান। প্রতি পিছ মণ্ডা বিক্রি হয় ৩৫ টাকা আর কেজি ৭০০ টাকায়। পঞ্চম বংশধর শ্রী রামেন্দ্রনাথ পাল জনকণ্ঠকে জানান, দেশের কোথাও কোনো শাখা নেই আমাদের এই মণ্ডা খেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন এই দোকানে। মণ্ডার জন্য মুক্তাগাছা সুপ্রসিদ্ধ।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ নয়, সারা দেশজুড়ে এই মিষ্টির খ্যাতি। দুধ আর চিনি দিয়ে মণ্ডা বানানো হয়। তবে শীতকালে আরেক ধরনের মণ্ডা পাওয়া যায় এখানে, চিনির বদলে গুড় দিয়ে তৈরি হয়। বাংলাদেশের আর কোথাও এমন সুস্বাদু মণ্ডা পাওয়া যায় না। মুক্তাগাছা তারাটি গ্রামের বাসিন্দা আরিফুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এই মণ্ডার জন্যই মুক্তাগাছা উপজেলা পরিচিত হয়েছে অনেক। আজ এখানে মণ্ডা প্রধান মিষ্টান্ন বলা যায় মণ্ডাকে। মুক্তাগাছায় কেউ বেড়াতে এলে কিংবা অতিথি আপ্যায়নের জন্য মণ্ডার বিকল্প নেই। আমাদের এক মাত্র চাহিদা মণ্ডাই।

জামালপুর জেলার তিন বন্ধু সাদিক, রবিউল, ফাহিম বলেন, ময়মনসিংহ সদরে বন্ধু সাব্বিরের বাড়িতে বেড়াতে এসে মুক্তাগাছার মণ্ডা কিনে খাচ্ছি। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল মণ্ডার দোকানে বসে মণ্ডা খাবো সেই ইচ্ছাও আজ পূরণ হইলো। পঞ্চম বংশধরের আরেক ছেলে মিথুন পাল জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রেখে সকল ধরনের কলাকৌশল ব্যবহার করে যাচ্ছি। এমনকি পুরাতন কারিগরের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েই মণ্ডা তৈরি করা হচ্ছে বর্তমানে।

আঁখি

×