
ছবি: সংগৃহীত
মস্তিষ্কে যা ভাবছেন, তা সরাসরি শব্দ বা বাক্যে রূপ দেওয়ার পথে বড় সাফল্য পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানীরা। সিডনির ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (UTS)-এর গবেষকরা এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যা মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে চিন্তা থেকে শব্দ তৈরি করতে পারে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে দীর্ঘদিন ধরে ইইজি (Electroencephalogram) ব্যবহৃত হচ্ছে মস্তিষ্কের কার্যক্রম বুঝতে, তবে এবার সেটিকেই ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের ‘চিন্তা পড়তে’। এই অত্যাধুনিক এআই মডেলটি তৈরি করেছেন পিএইচডি গবেষক চার্লস (জিনঝাও) ঝোউ এবং তার দুই তত্ত্বাবধায়ক—প্রফেসর চিন-টেং লিন এবং ড. লেওং।
গবেষণায় দেখা যায়, যখন ড. লেওং মুখে একটি শব্দও উচ্চারণ না করে ১২৮টি ইলেকট্রোডযুক্ত ইইজি ক্যাপ পরেন, তখন এআই সিস্টেমটি ‘I am jumping happily, it’s just me’—এই বাক্যটি তৈরি করতে সক্ষম হয়।
কীভাবে কাজ করে প্রযুক্তিটি
গবেষকরা জানান, ইইজি সিগন্যালের মাধ্যমে যে ব্রেনওয়েভ পাওয়া যায়, তা থেকে শব্দ বোঝার প্রক্রিয়া সহজ করতে এআইকে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ ও বাক্যের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একাধিক মস্তিষ্ক উৎস থেকে আসা সংকেতসমূহ মাথার খুলির উপর ভেসে ওঠে, যা স্বাভাবিকভাবে নয়েজপূর্ণ (অস্পষ্ট) ও ঝাপসা হয়। এআই সিস্টেম এসব ‘নয়েজ’ দূর করে স্পষ্ট সংকেত বের করে আনে।
নন-ইনভেসিভ প্রযুক্তি, নিউরালিংকের মতো নয়
ইলন মাস্কের নিউরালিংক প্রকল্পের সঙ্গে এর মিল থাকলেও এই গবেষণা একেবারেই নন-ইনভেসিভ বা অস্ত্রোপচারবিহীন। প্রফেসর লিন বলেন, ‘আমরা খুব সূক্ষ্মভাবে শব্দের অর্থ বুঝতে পারছি না, কারণ যেহেতু আমরা মস্তিষ্কের সেই নির্দিষ্ট জায়গায় ঢুকতে পারি না, যেটি শব্দ বিশ্লেষণ করে।’
তবে গবেষকরা বলছেন, এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা অনেক বিস্তৃত। বিশেষ করে স্ট্রোক আক্রান্তদের পুনর্বাসন, অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের ভাষা বিকাশ এবং পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য যোগাযোগের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে এটি।
বিশ্বজুড়ে গবেষণা ও অগ্রগতি
বিশ্বজুড়ে বাড়ছে এআই ও ইইজি প্রযুক্তির সম্মিলিত প্রয়োগ। চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাস জেনারেল ব্রিগহ্যাম-এর গবেষকরা এমন একটি এআই টুল তৈরি করেন, যা ঘুমের সময় মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে বছরখানেক আগেই মানসিক অবক্ষয়ের পূর্বাভাস দিতে পারে।
একটি গবেষণায় দেখা যায়, এই এআই মডেলটি ৮৫ শতাংশ সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে কারা মানসিক অবক্ষয়ের শিকার হবেন, যার সামগ্রিক নির্ভুলতা ছিল ৭৭ শতাংশ।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব