
ছবি: সংগৃহীত
আজকের দিনের এআই যতই শক্তিশালী হোক, ১৯৭৭ সালের আট-বিটের অ্যাটারি দাবার খেলায় হারিয়ে দিয়েছে আলোচিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটিকে। এমনই ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি।
সিট্রিক্সের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট কারুসো লিঙ্কডইনে জানান, এক আলাপচারিতায় চ্যাটজিপিটি নিজেই দাবা খেলায় অংশ নিতে চায় পুরনো অ্যাটারি ২৬০০-এর বিরুদ্ধে। কারুসো তখন ‘স্টেলা এমুলেটর’ ব্যবহার করে খেলা শুরু করেন। কিন্তু শুরুতেই স্পষ্ট হয়ে যায়—চ্যাটজিপিটি এই খেলার জন্য একেবারেই প্রস্তুত নয়।
চ্যাটজিপিটি যে ভুল করেছে, তা একজন শুরুর দাবাড়ুকেও লজ্জায় ফেলতে পারে। সে রুককে বিশপ ভেবে বসে, গুরুত্বপূর্ণ প্যাদার কৌশল বুঝতে পারেনি, এমনকি একাধিকবার ভুলে গেছে কোন ঘরে কোন ঘুঁটি আছে। খেলায় স্ট্যান্ডার্ড দাবার সংকেত ব্যবহার করেও সে নিজের ভুল থামাতে পারেনি।
অন্যদিকে, অ্যাটারি দাবার ইঞ্জিন ঠিকমতো চলেছে, কোনো আবেগ ছাড়াই নিজের কাজ করেছে এবং একসময় চ্যাটজিপিটি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। কারুসো জানান, পুরো খেলায় ৯০ মিনিট ধরে তিনি চেষ্টা করেছেন চ্যাটজিপিটিকে ভুল করা থেকে বাঁচাতে।
আশ্চর্যজনকভাবে, এই অ্যাটারি দাবা প্রোগ্রামটি এমন এক যুগের সৃষ্টি, যখন কম্পিউটার দিয়ে বৈধভাবে দাবা খেলা মাত্রই ছিল এক বড় অর্জন। ১৯৭০-এর দশকে লেখা এসব প্রোগ্রামের অনেকেই তখন পর্যন্ত ক্যাসলিং, এন পাসান্ত-এর মতো নিয়ম বুঝতেই পারত না।
তাহলে প্রশ্ন—এই প্রাচীন সফটওয়্যার কীভাবে আধুনিক ও আলোচিত এক চ্যাটবটকে দাবায় হারিয়ে দিতে পারে?
চ্যাটজিপিটি একটি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (LLM), যা মানুষের ভাষা বুঝে ও তৈরি করে। এটি গাণিতিকভাবে পরবর্তী শব্দ কী হতে পারে তা অনুমান করে চলে। কিন্তু দাবার মতো কঠিন, কাঠামোবদ্ধ, নিয়ম-কেন্দ্রিক গেম যেখানে পদক্ষেপের পরিকল্পনা, অবস্থান মনে রাখা এবং জটিল বিশ্লেষণ দরকার—সেখানে চ্যাটজিপিটির গঠনগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
চ্যাটজিপিটি একটি কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারলেও, তা দাবার বোর্ডের মতো "স্টেটফুল" পরিস্থিতি বুঝতে পারে না। ফলে, কোথায় কোন ঘুঁটি আছে, আগের চাল কী ছিল, সেটি ভুলে যায়। বোর্ডের ওপর কল্পিত ঘুঁটি তৈরি করে, অসম্ভব চাল দেয় এবং সেগুলোকে যুক্তিযুক্ত প্রমাণ করতে দীর্ঘ ব্যাখ্যা দিয়ে ফেলে।
এ ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—চ্যাটজিপিটি বা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল যতই দক্ষ হোক, তারা সবক্ষেত্রে মানুষের বিকল্প নয়। এমনকি একটি আটারি ইঞ্জিনও যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে খেলে, সেখানে চ্যাটজিপিটি ভাষাভিত্তিক প্রেডিকশন করে, কৌশলগত বিচার করে না।
দাবার কিংবদন্তি ডেভিড ব্রনস্টেইনের ভাষায় বলা যায়—“দাবার আসল সৌন্দর্য হলো, দাবা নিয়ে চিন্তা করার মধ্যেই।” আর সেটি এখনো চ্যাটবটের জগত নয়।
মুমু ২