ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

পেটের গ্যাস দূর করার ঘরোয়া উপায়

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ১৬ জুন ২০২৫

পেটের গ্যাস দূর করার ঘরোয়া উপায়

ছবি: সংগৃহীত

পেটের গ্যাস বা বদহজম একটি সাধারণ সমস্যা, যা খুবই অস্বস্তিকর হতে পারে। খাবার হজমে সমস্যা বা কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার কারণে পেটে গ্যাস তৈরি হয়। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

১. আদা: আদা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে খুবই কার্যকরী। এতে জিঞ্জারল নামক উপাদান রয়েছে, যা হজমে সহায়ক এনজাইম তৈরি করে এবং পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।

  • ব্যবহার পদ্ধতি: এক কাপ গরম পানিতে কয়েক টুকরা আদা কুচি দিয়ে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। ছেঁকে নিয়ে হালকা গরম অবস্থায় পান করুন। দিনে ২-৩ বার এই পানীয় পান করতে পারেন। চাইলে খাওয়ার আগে এক টুকরা আঁচা আদা চিবিয়েও খেতে পারেন।

২. জিরা: জিরা পেটের গ্যাস, ফোলাভাব এবং বদহজম কমাতে অত্যন্ত উপকারী। এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে গ্যাস জমা হওয়া রোধ করে।

  • ব্যবহার পদ্ধতি: এক চা চামচ জিরা হালকা ভেজে গুঁড়ো করে নিন। এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে খাবারের পর পান করুন। অথবা এক চা চামচ জিরা এক কাপ পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে চায়ের মতো পান করতে পারেন।

৩. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার: অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার (কাঁচা ও আনপাস্টুরাইজড) হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে এবং পেটে অ্যাসিডের মাত্রা ভারসাম্য রাখে, যা গ্যাস কমাতে সহায়ক।

  • ব্যবহার পদ্ধতি: এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে এক টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। খাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে এটি পান করুন।

৪. পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতার শান্তিদায়ক গুণাবলী হজমতন্ত্রের পেশীগুলোকে শিথিল করে এবং গ্যাস সহজে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।

  • ব্যবহার পদ্ধতি: কিছু পুদিনা পাতা গরম পানিতে দিয়ে চা তৈরি করে পান করুন। অথবা সরাসরি কয়েকটি পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।

৫. মৌরি: মৌরি বীজ হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে এবং পেটের ফোলাভাব ও গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। এতে অ্যানিথোল নামক যৌগ থাকে, যা হজমতন্ত্রের খিঁচুনি কমায়।

  • ব্যবহার পদ্ধতি: খাবারের পর এক চা চামচ মৌরি বীজ চিবিয়ে খেতে পারেন। অথবা মৌরি চা বানিয়েও পান করতে পারেন। এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ মৌরি দিয়ে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে ছেঁকে নিন।

৬. বেকিং সোডা (খাবার সোডা): বেকিং সোডা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে এবং পেটের অতিরিক্ত অ্যাসিডকে নিরপেক্ষ করে দ্রুত গ্যাস থেকে মুক্তি দিতে পারে।

  • ব্যবহার পদ্ধতি: এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করুন। তবে নিয়মিত বা অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়।

৭. পর্যাপ্ত পানি পান: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, যা গ্যাস তৈরির অন্যতম কারণ।

৮. ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া: তাড়াহুড়ো করে খাবার খেলে বাতাস বেশি পরিমাণে পেটে প্রবেশ করে, যা গ্যাস সৃষ্টির কারণ হয়। তাই ধীরে ধীরে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার গ্রহণ করুন।

৯. হাঁটাচলা ও হালকা ব্যায়াম: খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে হজম প্রক্রিয়া দ্রুত হয় এবং গ্যাস কমে। নিয়মিত হালকা ব্যায়ামও হজমতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে।

১০. কোন খাবার গ্যাস বাড়ায় তা চিহ্নিত করা: কিছু নির্দিষ্ট খাবার যেমন – শিম, বাঁধাকপি, ডাল, ব্রোকলি, অতিরিক্ত মিষ্টি বা ভাজাপোড়া খাবার কিছু মানুষের পেটে গ্যাস বাড়াতে পারে। আপনার কোন খাবারে গ্যাস হয় তা চিহ্নিত করুন এবং সেগুলো পরিমিত পরিমাণে খান বা এড়িয়ে চলুন।

যদি পেটের গ্যাসের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা তীব্র ব্যথা হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সাব্বির

×