
ছবি: সংগৃহীত
আজকের দিনে কর্মজীবন হোক বা অবসর, আমরা অনেক সময়ই দিনের বেশিরভাগটা চেয়ারে বসে কাটিয়ে দিচ্ছি। অফিসে কাজ, বাসায় টিভি দেখা বা মোবাইলে স্ক্রলিং—সময় কখন কীভাবে চলে যায়, বুঝে উঠার আগেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করছেন: দীর্ঘ সময় বসে থাকা শরীরের জন্য ভয়ংকর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে ৪ ঘণ্টার বেশি বসে থাকা মানুষের মধ্যে শুধু পিঠ বা ঘাড় ব্যথাই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এমনকি অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী, দৈহিক নিষ্ক্রিয়তা এখন বিশ্বের প্রধান মৃত্যুর কারণগুলোর একটি।
তবে আশার কথা, কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম নিয়মিত করলে শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। নিচে দেওয়া পাঁচটি ব্যায়াম শরীরের গঠন ঠিক রেখে শরীরকে কার্যক্ষম রাখা, পেশি মেরুদণ্ডের সক্রিয় রাখা ও সজীবতা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর।
১. ডেডহ্যাংস (Deadhangs)
অনেকের চোখে এই ব্যায়াম অ্যাথলেটদের জন্য। কিন্তু একটি দড়ি বা পুল-আপ বারে মাত্র ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড ঝুলে থাকা মেরুদণ্ডের চাপ কমাতে ও কাঁধের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
এই ব্যায়ামে বুকের অংশও প্রসারিত হয়, যা দিনের পর দিন বাঁকা হয়ে বসে থাকার ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ব্যায়াম গ্রিপ স্ট্রেংথ বাড়ায়, যা হৃদরোগ প্রতিরোধ ও দীর্ঘ আয়ুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
পার্কের জঙ্গল জিম বা বাসার সিম্পল বারেও এটি করা যায়। কঠিন কিছু না, শুধু নিঃশ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ঝুলে থাকুন।
২. ডেডলিফট (Deadlifts)
শুধু বডি বিল্ডারদের ব্যায়াম মনে হলেও, হালকা ওজনেও করা ডেডলিফট পিঠ, কোমর, পায়ের পেশি এবং মূল পেশিগুলো সক্রিয় করে তোলে।
দিনভর বসে থাকার ফলে শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ পেছনের অংশের পেশিগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। নিয়মিত ডেডলিফট করলে দৈনন্দিন জীবনের কাজে যেমন শিশু কোলে নেওয়া বা ভারী ব্যাগ তোলা—সবই সহজ হয়।
৩. চাইল্ড’স পোজ (Child’s Pose)
অনেকের কাছে এটি শুধু একটি যোগ ব্যায়ামের বিশ্রামের ভঙ্গি হলেও, এটি কোমরের নিচের অংশ ও কাঁধের ব্যথা কমাতে এবং শক্ত হয়ে যাওয়া নিতম্বের পেশি প্রসারিত করতে দারুণ কার্যকর।
এই ব্যায়ামটি প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট করলে শরীর ধীরে ধীরে আরামে ফিরে আসে এবং নিশ্বাস গভীরে পৌঁছায়, যা দীর্ঘসময় কুঁজো হয়ে বসে থাকার ফলে বাধাগ্রস্ত হয়।
৪. স্ফিংক্স পোজ (Sphinx Pose)
এই মৃদু ব্যায়ামটি মেরুদণ্ডের প্রাকৃতিক বাঁক পুনরুদ্ধারে সহায়ক। ডেস্কে বসে থাকার ফলে মেরুদণ্ড যে রকম গোল হয়ে যায়, তা ধীরে ধীরে ঠিক করতে সাহায্য করে স্ফিংক্স পোজ।
বুক প্রসারিত হয় এবং কোমরে হালকা চাপ পড়ে, যা পিঠের রক্ত চলাচল ও হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। যারা মধ্যপিঠে টান বা পাঁজরের পাশে অস্বস্তি অনুভব করেন, তাদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী।
৫. গ্লুট ব্রিজ (Glute Bridges)
এই সহজ ব্যায়ামটি বসে থাকার ফলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া হিপ পেশিগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করে তোলে।
গ্লুট পেশি শরীরের ভঙ্গি ঠিক রাখা, কোমরের সাপোর্ট এবং হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত গ্লুট ব্রিজ করলে পায়ের জোর বাড়ে এবং মস্তিষ্কের সঙ্গে পেশির সংযোগও পুনরুদ্ধার হয়, যা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিটের সচেতন ব্যায়াম দীর্ঘমেয়াদে শরীরকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে পারে। বসে থাকার এই যুগে হালকা ব্যায়াম করে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার বিকল্প নেই।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব