
সমসংখ্যক নারীর গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠানে এগিয়ে যাওয়া সময়ের পরম ন্যায্যতা। যে কোনো সমাজের নারী-পুরুষের সম্মিলিতভাবে উন্নয়ন কর্মযোগে অংশীদারিত্ব গুরুত্ব এক বিষয়। সামাজিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমে সমধিক গুরুত্ব যুগ-যুগান্তরের পরম ন্যায্যতা। আবার চিরায়ত প্রবাদ বাক্যে বলা হচ্ছে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সেখানে যদি বৈষম্যপীড়িত অবস্থা তৈরি হয় তাহলে নারী যেমন পিছু হটবে পাশাপাশি পুরো অঙ্গনও তারতম্যের শিকলে আবদ্ধ হবে। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় সেখানে নারী শিক্ষাও জরুরি, অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশের সিংহভাগ এখনো গ্রামীণ জনপদের প্রত্যন্ত এলাকা। শিক্ষার আলো সর্বত্র পৌঁছানো আরও বিপদ-বিপত্তির আবর্তে পড়া সব সময়ই দৃশ্যমান হচ্ছে। শুধু তাই নয়, উত্তরণের পথ নির্দেশও নারী সমাজকে বিভিন্ন মাত্রায় চালিতও করছে। বাংলাদেশের সীমানায় আমরা কিন্তু বরাবরই উচ্চারণ করি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। আলোচনা করছিলাম প্রত্যন্ত অঞ্চল তেঁতুলিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রীদের নজরকাড়া অবস্থান নিয়ে। আমরা জানি প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সেখানে দৃশ্যমান নয়। তার ওপর ষড়ঋতুর বিচিত্র আবহে আমরা বর্ষাকালের বৃষ্টিধারার এক প্রতিবেশ পার করছি। সেখানে গ্রামীণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিত্য আসা যাওয়া ভিন্নমাত্রায় অসহনীয় দুর্ভোগ। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া গ্রাম বাংলার নিভৃত অঞ্চলের শস্য শ্যামল, সমারোহের বরমাল্য হলেও রাস্তাঘাটের নৈমত্তিক দুর্ভোগও পিছু ছাড়ে না। তার ওপর শ্রাবণের ঝরঝর বর্ষণে পথঘাটের যে ক্রান্তিকাল তাও যেন চলাচলের উপর্যুক্ত থাকেই না। সেখানে নিত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া ছাত্রীদের দুর্ভোগ যেন বাড় বাড়ন্ত। যথা সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো বাড়তি দুর্বিপাক তো বটেই। বিভিন্ন ভ্যানে চড়ে ছাত্রীদের যাওয়া আসা কোনোভাবেই নিরাপত্তার বলয়ে থাকে না। ক্লান্তি আর অস্বস্তি যেন পদে পদে। সেই তেঁতুলিয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে যৌক্তিক সুযোগ সুবিধা উন্মোচন করা সত্যিই এক মহৎ কর্মযোগ। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৬ ছাত্রীকে বাইসাইকেল প্রদান করে প্রশাসন যেভাবে নারী শিক্ষাকে সম্মান জানায় তাও দেশের গ্রামীণ জনপদের জন্য পরম বরমাল্য উপহার। ১৬ ছাত্রীর জন্য বরাদ্দ করা হলো বাইসাইকেল, যা বর্ষাবিঘ্নিত পথযাত্রায় অনেকটা স্বস্তির সম্ভাবনায় নতুন আলো উদ্ভাসিত হলো। হতদরিদ্র পরিবারের ১৬ কন্যা পেল এমন প্রয়োজনীয়, অভাবনীয় উপহার যা তাদের শিক্ষাজীবনকে স্বস্তিকরই শুধু নয়, আনন্দ উপভোগে নিত্য যাত্রা পথকেও পরম নির্মাল্যে ভরিয়ে দিল। একটি অবিস্মরণীয় নজির আর উপহার তো বটেই। শুধু তেঁতুলিয়া কেন? সিংহ গ্রামবাংলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত জনপদের বৃষ্টিবিঘ্নিত রাস্তাঘাট পার হতে এমন দরকারি বাইসাইকেল নিতান্ত জরুরি। শুধু কি বর্ষণের বারিধারা? গ্রীষ্মকালীন তপ্ত রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে গ্রামীণ ছাত্রীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হিমশিম খায়। বাইসাইকেলের যাত্রায় সময়ের সাশ্রয় যেমন হয় পাশাপাশি ছাত্রীরা চরম দুর্বিপাক থেকে পরিত্রাণ পায়। তাই এমন মহৎ উদ্যোগ গ্রামের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রসারিত করতে পারলে দেশের পল্লী জননীর কোলে লালিত কন্যা সন্তানরা নিরাপদে নির্বিঘ্নে শিক্ষাজীবন চালিয়ে নিতে মোটেই দমে যাবে না।
প্যানেল/মো.