
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রতি বছর ১ আগস্ট পালিত হয় বিশ্ব ফুসফুস ক্যান্সার দিবস। এদিন স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ফুসফুস ক্যান্সার আর শুধু ধূমপানকারীদের রোগ নয়। আজকাল ধূমপান না করেও অনেক নারী-পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, এমনকি যাঁরা কখনো তামাকের সংস্পর্শে আসেননি, তারাও ঝুঁকির বাইরে নন।
আচমকা ধরা পড়ে যাচ্ছে ক্যান্সার
Cancer Management and Research–এ প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, আগে ধারণা ছিল যে ধূমপান ছাড়ার বহু বছর পর ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক জটিল। অনেকে নিজেকে ‘লো রিস্ক’ বা কম ঝুঁকির মানুষ ভেবে বিপদ বুঝতেই পারেন না।
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ কী কী?
জসলক হাসপাতালের সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. সতীশ আর রাও বলেন, এই ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গগুলো অনেকটা সাধারণ সর্দি-কাশির মতো মনে হয়। ফলে অনেক সময় রোগ ধরা পড়ে দেরিতে।
প্রধান উপসর্গগুলো হলো:
দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশি
কফে রক্ত দেখা
অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন কমে যাওয়া
ক্ষুধামান্দ্য ও দুর্বলতা
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ধূমপান ছাড়া কী কারণে ফুসফুস ক্যান্সার হয়?
ধূমপান ছাড়াও একাধিক কারণ রয়েছে যা ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য দায়ী হতে পারে। Journal of the National Cancer Centre–এর তথ্যমতে, এসব কারণের মধ্যে রয়েছে—
প্যাসিভ স্মোকিং বা অন্যের ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসা
বায়ুদূষণ, বিশেষ করে PM2.5, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের ধুলা
কারখানায় বা রাসায়নিক পরিবেশে কাজ করা
হেয়ার ডাই, অ্যারোসল, ক্লিনারসহ কিছু গৃহস্থালি পণ্যে থাকা টক্সিন
ডায়াবেটিস বা এইচআইভি/এইডসের মতো রোগে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া
বংশগত ঝুঁকি
বিশেষ করে অ্যাডেনোকারসিনোমা ধরণের ফুসফুস ক্যান্সার ধূমপান না করা রোগীদের মধ্যে বাড়ছে। Missouri Medicine–এর তথ্য অনুযায়ী, এই রোগের ৪০% পর্যন্ত ক্ষেত্রে জিনগত মিউটেশন যুক্ত থাকে।
অ্যাডেনোকারসিনোমা কি বংশগত ফুসফুস ক্যান্সার?
ডা. রাও বলেন, “অ্যাডেনোকারসিনোমা টাইপ ক্যান্সারে EGFR ও ALK নামে কিছু নির্দিষ্ট জিনগত মিউটেশন ধরা পড়ে। এখন রক্তের মাধ্যমে এই মিউটেশন শনাক্ত করা সম্ভব হলেও সাধারণ মানুষদের জন্য এটি এখনও নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ে আসেনি।”
পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে বা সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
স্ক্রিনিংয়ের বাধা কী?
Journal of Thoracic Oncology জানায়, ভারতের মতো দেশে স্ক্রিনিং মূলত ধূমপায়ী বা উচ্চঝুঁকির মানুষদের জন্য নির্ধারিত। ফলে যাঁরা ধূমপায়ী নন, কিন্তু উপসর্গ রয়েছে বা পরিবেশগত ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে।
কী করণীয়?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী:
সক্রিয় বা প্যাসিভ, যেকোনো ধরণের তামাক গ্রহণ পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে হবে
ঘরের বায়ুগুণমান উন্নত করা
কাশি, রক্তমিশ্রিত কফ, ওজন হ্রাসের মতো উপসর্গ থাকলে দেরি না করে চিকিৎসা নিতে হবে
পরিবারের ক্যান্সার ইতিহাস চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে
সন্দেহ হলে এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা জিনগত পরীক্ষার মতো পরবর্তী ধাপের টেস্ট নিতে হবে
ধূমপান ছাড়াও বহু কারণে ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে। সময়মতো লক্ষণ চেনা, সচেতনতা বাড়ানো ও স্ক্রিনিংয়ের পরিধি বাড়ালে এই মরণব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই আরও কার্যকর হতে পারে।
সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস
নোভা