ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ঘুমের আগে এই ৭টি ভুল আপনাকে ঠেলে দিচ্ছে নিদ্রাহীনতায়

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৩১ জুলাই ২০২৫

ঘুমের আগে এই ৭টি ভুল আপনাকে ঠেলে দিচ্ছে নিদ্রাহীনতায়

ছবি: সংগৃহীত

রাত ১টার সময় ফোন ঘাঁটা কিংবা হঠাৎ টেকঅ্যাওয়ে অর্ডার দেওয়া—আমরা সবাই এমনটা করে ফেলি। কিন্তু ঘুমের গুরুত্ব ভুলে যাওয়া যেন কখনো না হয়।

আপনি যদি নিয়মিত ঘুমের ঘাটতিতে ভোগেন, বা রাতভর ঘুম না আসায় ভেড়া গুনেও কাজ না হয়—তাহলে জেনে নিন ঘুমের আগে আমাদের করা সবচেয়ে বড় কিছু ভুল, যা ঘুমের মান খারাপ করে দিতে পারে।

ঘুমের আগে করা ৭টি বড় ভুল

প্রখ্যাত ঘুম গবেষক অ্যালান রেখ্টশাফেন ঘুমের গুরুত্ব নিয়ে বলেন, “ঘুম যদি জীবনের জন্য একেবারেই অপরিহার্য না হতো, তাহলে এটা হতো বিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুল।”

অর্থাৎ, ঘুম আমাদের অস্তিত্বের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাজার হাজার বছরের বিবর্তনের পরও মানুষকে প্রতিদিন ঘুমাতে হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, আজও অনেকেই ঘুমের ব্যাপারে বড় বড় ভুল করে বসে। নিচে তেমনই সাতটি সাধারণ ভুল তুলে ধরা হলো—

১. রাতে বেশি খাওয়া

রাতের খাবারে কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খেলে ঘুমের গুণমান খারাপ হতে পারে। যেমন—চিপস, আইসক্রিম, পিৎজা বা চিনি-যুক্ত খাবার আপনার ঘুমের উভয় ধাপ—REM ও Non-REM—দুর্বল করে।

গবেষণা বলছে, যারা কম ঘুমায়, তারা বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে, যা মূলত আসে চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট থেকে। রাতে ভারী খাওয়ার পর শরীরের বিপাকক্রিয়া (Metabolism) বাড়ে, ফলে শরীরের তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। এই বাড়তি তাপমাত্রা ঘুম-জাগরণের স্বাভাবিক ছন্দ (sleep-wake rhythm) নষ্ট করতে পারে, যার প্রভাবে আপনার ঘুমের ধরণ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।

২. ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাওয়া

রাতে বেশি খাওয়া যেমন ক্ষতিকর, তেমনি একেবারে না খেয়ে ঘুমাতে যাওয়াও ঘুমের জন্য ক্ষতিকর।

ঘুমানোর সময় শরীর স্থির থাকলেও মস্তিষ্ক কাজ করতে থাকে এবং তার জন্য প্রয়োজন পড়ে শক্তির। তাই ঘুমানোর আগে অল্প পরিমাণে সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট খেলে ইনসুলিন নিঃসরণ সহজ হয় এবং তা থেকে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ পায়, যা ঘুমাতে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পর্যাপ্ত ঘুমায় না, তাদের খাদ্যাভ্যাসে ভিটামিন এ, সি, ডি, ই ও কে-এর ঘাটতি থাকে। এসব ঘাটতি ঘুমে সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে তা খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন যোগ করে সহজেই কাটিয়ে ওঠা যায়।

৩. ঘুমানোর ঠিক আগে কড়া ব্যায়াম করা

রাত ১২টার আগে ঘাম ঝরিয়ে জিমে যাওয়াটা স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, ঘুমানোর ঠিক আগে উচ্চমাত্রার ব্যায়াম করলে তা ঘুমের মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

যদিও হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম ঘুমের মান উন্নত করে, তবে ঘুমানোর আগে খুব উচ্চমাত্রার ও ভারী ব্যায়াম করলে তা হৃদস্পন্দনের ওপর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে ঘুমের প্রথম কয়েক ঘণ্টায়।

তবে যারা নিয়মিত সন্ধ্যায় ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য আশার খবর হলো—ঘুমানোর ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে উচ্চমাত্রার ব্যায়াম করলে সাধারণত ঘুমের কোনো ক্ষতি হয় না, যদি আপনি সুস্থ ও মধ্যবয়সী হন।

৪. ঘুমানোর আগে স্ক্রিন দেখা

আমাদের শরীর দিনের বেলায় সচল থাকতে যে নীল আলো (blue light) চায়, রাতের বেলায় সেই আলোই হয়ে দাঁড়ায় ঘুমের শত্রু। স্ক্রিনের নীল আলো ঘুমের মান ও সার্কাডিয়ান রিদম (Circadian Rhythm) বিপর্যস্ত করে।

সার্কাডিয়ান রিদম হলো শরীরের ২৪ ঘণ্টার প্রাকৃতিক ছন্দ, যা বলে দেয় কখন ঘুমানো, খাওয়া বা জাগা উচিত। মেলাটোনিন নামক হরমোন এই ছন্দকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

যদি আপনি রাতে ফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তাহলে অন্তত স্ক্রিনে ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন। এখন প্রায় সব ফোনে নাইট মোড নামে একটি অপশন থাকে, যা স্ক্রিনের তাপমাত্রা পরিবর্তন করে নীল আলো ফিল্টার করে দেয়। ঘুমের আগে ফোন ব্যবহারে বাধা না থাকলেও, অন্তত এই ফিচার চালু রাখুন।

৫. ফোনের নোটিফিকেশন চালু রাখা

ঠিক ঘুমিয়ে পড়ার সময় “টিং… টিং…”—হঠাৎ কোনো গ্রুপে একগাদা মেসেজ আসলো আর আপনি ফোন হাতে তুলে নিলেন। আবার নীল আলো, আবার মনোযোগ বিচ্যুত, আবার ঘুম হারিয়ে গেল।

কখনো হয়তো ইমেইলের নোটিফিকেশন রাতেই এসে পড়ে। এই সমস্যা সহজেই এড়ানো যায়—ঘুমাতে যাওয়ার সময় ফোনের অ্যারোপ্লেন মোড চালু করে দিন।

৬. রাতে মদ্যপান

অনেকেই মনে করেন, অ্যালকোহল মানেই ঘুম আনে। কিন্তু বাস্তবে এটি ঘুমের মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

গবেষণা বলছে, রাতে ২ গ্লাস অ্যালকোহল পান করলে ঘুমের মান প্রায় ৩৯% কমে যেতে পারে, বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে।

অ্যালকোহল গ্রহণকারীরা ঘুমের সময় শ্বাসরোধ (Sleep Apnea) সমস্যায়ও বেশি ভোগেন। এই সমস্যায় ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, ফলে ঘুম ভেঙে যায়, মাথাব্যথা হয় এবং পরদিন ক্লান্তি ও রাগ তৈরি হয়।

৭. ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন বা উত্তেজক পদার্থ গ্রহণ

রাতের কফি বা দুধ-চা যতই আরামদায়ক হোক না কেন, এতে থাকা ক্যাফেইন ঘুমের মান নষ্ট করতে পারে।

গবেষণা বলছে, ঘুমানোর ৬ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাফেইন গ্রহণ করলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে।

এছাড়া, অবৈধ মাদক বা উত্তেজক যেমন কোকেইন গ্রহণ করলে ঘুমহীনতা বাড়ে। নিয়মিত ব্যবহারে তা অনিদ্রার (Insomnia) স্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আবির

×