ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

হঠাৎ ভুলে যাচ্ছেন? স্মৃতিভ্রান্তি এড়াতে এই ৮টি ভুল এখনই বন্ধ করুন

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৩১ জুলাই ২০২৫

হঠাৎ ভুলে যাচ্ছেন? স্মৃতিভ্রান্তি এড়াতে এই ৮টি ভুল এখনই বন্ধ করুন

ছবিঃ সংগৃহীত

আমরা অনেকেই ভাবি, বয়স বাড়লেই বুঝি স্মৃতিশক্তি কমে যায়—তবে আসল ঘটনা একটু ভিন্ন। আজকাল এমনকি ৪৫ বছর বয়স পার না হতেই অনেকে ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনুভব করেন। কিন্তু শুধু বয়স নয়, আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসও এর জন্য দায়ী।

ভালো খবর হচ্ছে—আপনার ঘুম, খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চা, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট—এই সবই কিন্তু মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাই আজ থেকেই কিছু বদল আনলে আপনি ভবিষ্যতে স্মৃতিভ্রান্তির ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারেন। নিচে ৮টি ভুল অভ্যাস দেওয়া হলো যেগুলো ত্যাগ করলে মস্তিষ্ক অনেকটাই হালকা নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে!

১. অতিরিক্ত কৃত্রিম মিষ্টি বাদ দিন
চিনি না খেয়ে যারা "ডায়েট কোক" বা কৃত্রিম মিষ্টিজাতীয় খাবারে ভরসা রাখেন, একটু সাবধান!
এসব কৃত্রিম সুইটেনার যেমন অ্যাসপারটেম বা সুক্রালোজ, বেশি খেলে ভবিষ্যতে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি কিছু গবেষণায় তো বলা হয়েছে, এগুলো ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

তবে চিনিও অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। তাই সমাধান? মাঝেমাঝে একটু মধু বা চিনি দিয়ে কফি খান, ফল খেয়ে মিষ্টি চাহিদা মেটান—পরিমিতভাবে, আনন্দ নিয়ে।

২. ব্যায়াম বাদ দিলে হবে না
একটু নড়াচড়া করলেই মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ে, আর তাতেই মস্তিষ্ক চাঙা থাকে।
আপনি জিমে না গেলেও চলবে—বাড়ির কাজ, হাঁটা, বাচ্চাদের সঙ্গে দৌড়ানো, বাগান করা—এসবই কিন্তু ব্যায়াম। সপ্তাহে ৫ দিন, অন্তত ৩০ মিনিট শরীরকে একটু নড়াচড়া করান।

৩. একা না থেকে মানুষের সঙ্গে থাকুন
মনের খোরাকই মস্তিষ্কের টনিক!
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, পরিবারে সময় কাটানো বা প্রতিবেশীর সঙ্গে গল্প—এসব ছোট ছোট সম্পর্কই স্মৃতিশক্তিকে জীবন্ত রাখে। ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরে এসে মানুষের সঙ্গে দেখা করুন, কথা বলুন, হেসে উঠুন।

৪. ঘুম নিয়ে আর ছেলেখেলা নয়
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কে টক্সিন জমে, যা পরে ডিমেনশিয়ার মতো সমস্যা আনতে পারে।
প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম দরকার। ঘুম আসছে না? মোবাইল বন্ধ করুন, বই পড়ুন, আর একটা শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন। সব চেষ্টা করেও যদি ঘুম ঠিক না হয়, একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫. চটকদার ডায়েট নয়, খাবারে বৈচিত্র্য আনুন
"সুপারফুড" না খেলেও আপনি ঠিক আছেন—শুধু রঙিন খাবার খেতে ভুলবেন না।
ডিম, শাকসবজি, বাদাম, টক ফল, মাছে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টই স্মৃতিশক্তির জন্য দারুণ কাজ করে। প্রতিদিনের খাবারে একটু ব্যালান্স রাখুন, সেটাই সবচেয়ে জরুরি।

৬. স্ট্রেস? হালকাভাবে নেবেন না
চাপ থাকবেই, কিন্তু সেটা হ্যান্ডেল করতে না পারলেই বিপদ।
চাপ যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে, তাহলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট নিজের জন্য রাখুন—হাঁটতে যান, গান শুনুন, লিখুন বা কেবল চুপচাপ বসে থাকুন।

৭. ডিমের কুসুম ফেলে দিচ্ছেন? থামুন!
ডিমের ভেতরের কুসুমেই থাকে চোলিন ও লুটেইনের মতো উপাদান—যা মস্তিষ্কের পুষ্টি যোগায়।
প্রতিদিন ১টা ডিম আপনাকে অনেকটা এগিয়ে রাখে। ডিম খেতে না চাইলে মুরগির মাংসেও কিছুটা উপকারি উপাদান মেলে।

৮. মদ্যপানে সংযম রাখুন
প্রতিদিন এক গ্লাসের বেশি খেলে মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি হতে পারে।
আপনি যদি পান করেন, তাহলে পরিমাণে থাকুন। নারীদের জন্য দিনে ১ গ্লাস, পুরুষদের জন্য সর্বোচ্চ ২ গ্লাসই যথেষ্ট। বিকল্প হিসেবে পান করতে পারেন হেলদি মকটেল বা ফলের শরবত।


বয়স যতই বাড়ুক, মস্তিষ্ক ঠিকঠাক কাজ করুক—এটা আমাদের সবার ইচ্ছা। একটু ঘুম, একটু হাঁটা, একটু হাসি আর ভালো খাবার—এই সহজ অভ্যাসগুলোই আপনাকে দিবে এক নির্ভার ভবিষ্যৎ।

তাই আজ থেকেই শুরু করুন। নিজের জন্য, নিজের মস্তিষ্কের জন্য, নিজের আগামী দিনের জন্য।
আপনি যতটা ভালো থাকবেন, আপনার মনে-প্রাণে তার প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে।

মনে রাখুন: "স্মৃতি বাঁচে যত্নে, মস্তিষ্ক বাঁচে সচেতনতায়।"

 

মারিয়া

×