
একটি পরীক্ষামূলক সর্বজনীন ক্যানসার ভ্যাকসিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তুলতে পারে এবং প্রচলিত থেরাপির কার্যকারিতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা হেলথ-এর বিজ্ঞানীরা এই ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছেন।
গবেষণার প্রধান শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ড. ইলিয়াস সায়োর, এটি ক্যানসার চিকিৎসায় একটি নতুন অধ্যায় হতে পারে। ভ্যাকসিন, তবে একটু আলাদা।
এটি সাধারণ ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের মতো কাজ করলেও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেখানে ফ্লু ভ্যাকসিন ভাইরাসের বিরুদ্ধে আগাম প্রতিরক্ষা তৈরি করে, এই ক্যানসার ভ্যাকসিন শরীরে ইতিমধ্যেই বেড়ে ওঠা টিউমারকে লক্ষ্য করে। লক্ষ্য, টিউমার ধ্বংস ও ভবিষ্যতে তা আবার ফিরে আসা ঠেকানো।
ড. সায়োর বলেন, চ্যালেঞ্জ একটাই ক্যানসারের ধরন রোগীভেদে আলাদা। তাই সাধারণত প্রতিটি ক্যানসার ভ্যাকসিনকে রোগী অনুযায়ী আলাদা করে তৈরি করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। সেই সময়েই অনেক ক্যানসার রূপ পাল্টে ফেলে।
গবেষকরা এমন একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন যা ব্যক্তিগতকরণের প্রয়োজন ছাড়াই কাজ করতে পারে। এটি তৈরি হয়েছে এমআরএনএ প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। একই প্রযুক্তি যার মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছিল।
এই এমআরএনএ ভ্যাকসিন শরীরের প্রাথমিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইনেইট ইমিউন সিস্টেম) সক্রিয় করে তোলে এবং টাইপ-১ ইন্টারফেরন নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেতদায়ী প্রোটিন উৎপন্নে সহায়তা করে। ইন্টারফেরন ক্যানসার কোষ চিহ্নিত করে ধ্বংস করার সংকেত দেয়।
ইঁদুরের ওপর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ভ্যাকসিন ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এমনকি এমন ক্যানসারেও কাজ করেছে, যেখানে প্রচলিত ইমিউন চেকপয়েন্ট ইনহিবিটার থেরাপি কাজ করেনি। ভ্যাকসিন একা কিংবা থেরাপির সঙ্গে মিলিয়ে, উভয়ভাবেই কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এই ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডা টিউমারের (যেমন অগ্ন্যাশয়, ডিম্বাশয়, এবং কিছু স্তন ক্যানসার) বিরুদ্ধেও কাজে লাগতে পারে। যেগুলো সাধারণত শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার চোখ এড়িয়ে যায়।
ড. সায়োর এবং তার দল ইতিমধ্যেই একটি মানব ট্রায়াল শুরু করেছেন, যেখানে একসঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে দুটি ধরণের ভ্যাকসিন; একটি সর্বজনীন এবং অপরটি ব্যক্তিগতভাবে তৈরি। অংশ নিচ্ছেন উচ্চ-গ্রেড গ্লিওমা বা অস্টিওসারকোমা রোগী। লক্ষ্য সময় বাঁচিয়ে দ্রুত ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করা।
ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের ডায়ানা আজ্জাম কাজ বলেছেন, এই গবেষণা ইঙ্গিত দেয়, সঠিক সময়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সামান্য একটি ধাক্কা দিলেই থেরাপি কাজে লাগতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, মানবদেহে প্রয়োগের আগে এর দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সানজানা