ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

নীরবে আক্রমণ করেছে লিভার ক্যান্সার? এই প্রাথমিক লক্ষণগুলো অবহেলা করলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ, সতর্ক করলেন চিকিৎসক

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ৩১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪৫, ৩১ জুলাই ২০২৫

নীরবে আক্রমণ করেছে লিভার ক্যান্সার? এই প্রাথমিক লক্ষণগুলো অবহেলা করলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ, সতর্ক করলেন চিকিৎসক

মানবদেহের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ অঙ্গ লিভার বা যকৃত। হজম, রক্ত পরিশোধন, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়া এবং পুষ্টি সঞ্চয়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেটের উপরের ডান পাশে অবস্থিত এই অঙ্গটিতে যদি মারাত্মক কোনো সমস্যা, বিশেষ করে হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমার মতো ক্যান্সার দেখা দেয়, তাহলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে যদিও প্রাথমিক লক্ষণ অনেক সময়ই তেমন গুরুতর মনে না-ও হতে পারে।

লিভার ক্যান্সারকে অনেক সময় ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়, কারণ এটি প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ সৃষ্টি নাও করতে পারে। তবে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ শুরুতেই চিনে নিতে পারলে যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব, যা জীবন বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি।

ভারতে ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ২.২৭ জন লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় একটি উদ্বেগের বিষয়। তাই এর প্রাথমিক উপসর্গগুলো চিনে রাখা এবং অবহেলা না করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

নিচে এমন পাঁচটি উপসর্গ তুলে ধরা হলো, যেগুলোর যেকোনোটি দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

পেটে স্থায়ী অস্বস্তি বা ব্যথা

লিভার ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গগুলোর একটি হলো পেটের ডান দিকের ওপরের অংশে স্থায়ী ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব। অনেক সময় এই অস্বস্তি পিঠ বা ডান কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, এবং পেটে এক ধরনের ভারী অনুভূতিও দেখা দেয়। সাধারণ গ্যাস্ট্রিক বা সংক্রমণের কারণে এমন অস্বস্তি হওয়ায় অনেকেই এটি অবহেলা করেন, ফলে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব ঘটে।

খাবারে অরুচি

হঠাৎ করে খাওয়ার আগ্রহ কমে যাওয়া, বিশেষ করে কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই, লিভার ক্যান্সারের শুরুর দিকের একটি লক্ষণ হতে পারে। শরীরের বিপাক ও লিভারের কার্যক্রমে টিউমার-জনিত পরিবর্তনের কারণে একটানা পেট ভরা অনুভূতি তৈরি হতে পারে অথবা খাওয়ার ইচ্ছেই চলে যেতে পারে। এ ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অকারণে ওজন কমে যাওয়া

খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামের পরিবর্তন ছাড়াই যদি শরীরের ওজন কমতে শুরু করে, সেটিও লিভার ক্যান্সারের পূর্বাভাস হতে পারে। টিউমার বড় হতে থাকলে শরীরের স্বাভাবিক বিপাকব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে, ফলে ধীরে ধীরে ওজন কমে যায়। এই উপসর্গটি অনেক সময় ভুলভাবে অন্য কারণে হয়েছে ভেবে অবহেলা করা হয়, যা বিপজ্জনক হতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ও দুর্বলতা

দৈনন্দিন চাপ, অতিরিক্ত কাজ বা ঘুমের ঘাটতির কারণে ক্লান্তি ও দুর্বলতা হওয়াটা সাধারণ ঘটনা হলেও, যদি তা একটানা লেগেই থাকে এবং বিশ্রামেও উপশম না হয়, তাহলে তা লিভার ক্যান্সারের সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে। লিভার যদি ঠিকমতো পুষ্টি গ্রহণ ও বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশন করতে না পারে, তবে শরীর ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।

পেট ফোলা বা গ্যাস জমার অনুভূতি

লিভারে সমস্যা দেখা দিলে পেটে পানি জমতে পারে, যার ফলে ফোলা বা ভারী অনুভূতি দেখা যায়। যদি টিউমার লিভারের স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। পেট ফোলা সাধারণ কারণে হলেও, যদি এর সঙ্গে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া বা অরুচি যুক্ত হয়, তবে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়।

শুরুতেই রোগ শনাক্ত করা লিভার ক্যান্সার মোকাবেলায় বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

এই উপসর্গগুলোর অনেকটাই হালকা বা অস্পষ্ট মনে হলেও, যারা ইতোমধ্যে লিভারজনিত জটিলতায় ভুগছেন, তাদের জন্য এগুলো অবহেলা করার মতো নয়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা লিভার ক্যান্সারের আগেভাগে শনাক্তকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সচেতন থাকা, সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং করানোই পারে আপনাকে ও আপনার প্রিয়জনকে এই নীরব ঘাতকের বিপদ থেকে সুরক্ষা দিতে।

 

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/3dc5wp9f

আফরোজা

×