
ছবি: সংগৃহীত
মানবদেহ অত্যন্ত জটিল এবং সূক্ষ্ম। অসুস্থতার আগে শরীর অনেক সময় ইঙ্গিত দিয়ে দেয়—তবে সেই সংকেতগুলো সবসময় বুঝে ওঠা যায় না। হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রেও বিষয়টা এমনই। অনেকে হয়তো জানেন না, কিন্তু কানের লতিতে একটি হালকা ভাঁজ বা দাগ হতে পারে এমন একটি সংকেত—যা হৃদরোগের পূর্বাভাস দিতে পারে।
এই ভাঁজটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরিচিত “ডায়াগনাল ইয়ারলোব ক্রিজ” (Diagonal Earlobe Crease – DELC) নামে, যেটিকে “ফ্র্যাঙ্ক’স সাইন” বলেও ডাকা হয়। ১৯৭৩ সালে ডা. স্যান্ডার টি. ফ্র্যাঙ্ক প্রথম এটি পর্যবেক্ষণ করেন ২০ জন বুকে ব্যথায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে, যাদের সবারই করোনারি ধমনীতে রুদ্ধতা পাওয়া গিয়েছিল।
পরবর্তীতে একাধিক বড় গবেষণায় দেখা যায়, যেসব রোগীর করোনারি আর্টারি ডিজিজ, সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ বা পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ রয়েছে, তাদের মধ্যে এই DELC বা ফ্র্যাঙ্ক’স সাইন অনেক বেশি হারে দেখা যায়। এমনকি হলিউড পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশের কানে এই চিহ্ন রয়েছে বলে জানা যায়।
২০১৭ সালের একটি গবেষণায় ২৪১ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৭৯% রোগীর কানে ফ্র্যাঙ্ক’স সাইন লক্ষ্য করা গেছে। যাদের “Transient Ischemic Attack” (TIA) হয়েছিল, তাদের ৭৩ শতাংশ এবং পূর্ণমাত্রার স্ট্রোকে আক্রান্ত ৮৮ জনের মধ্যে ৮৯ শতাংশের কানে এই ভাঁজ ছিল।
এ নিয়ে প্রাকৃতিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডা. মাইকেল মারে বলেন, “যাদের কানের লতিতে ডায়াগনাল ক্রিজ রয়েছে, তাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। ৪০টিরও বেশি গবেষণায় এই সম্পর্ক পাওয়া গেছে।” তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, “কানের লতিতে অনেক ছোট রক্তনালী থাকে। যখন শরীরে রক্ত ও অক্সিজেন সঞ্চালনে সমস্যা দেখা দেয়, তখন ওই অংশে ভাঁজ পড়ে। তাই এটি শুধুই বাহ্যিক লক্ষণ নয়, বরং শারীরিক সমস্যার একটি প্রতিচ্ছবি।”
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, DELC থাকা মানেই নিশ্চয়ই আপনি হৃদরোগে আক্রান্ত হবেন—এমন নয়। এটি একটি ঝুঁকির সূচক, চূড়ান্ত নির্ণয় নয়। তবুও, এই ধরনের চিহ্ন দেখা গেলে জীবনযাত্রায় সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং হৃদযন্ত্রের যত্নে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আসিফ