ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

টাইপ-২ ডায়াবেটিসে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ছে, সতর্ক হোন এখনই

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ১ আগস্ট ২০২৫

টাইপ-২ ডায়াবেটিসে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ছে, সতর্ক হোন এখনই

ছবিঃ সংগৃহীত

টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য 'সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক' বা নিঃশব্দ হৃদরোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। এই ধরনের হার্ট অ্যাটাক সাধারণত কোনো স্পষ্ট উপসর্গ ছাড়াই ঘটে, যা বেশ বিপজ্জনক হতে পারে। ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ু ক্ষতির কারণে অনেক সময় বুকের ব্যথা বা বাহুতে অস্বস্তির মতো সাধারণ লক্ষণগুলো অনুভূত হয় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ইসিজি (EKG), ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং রক্ত পরীক্ষা—যা হৃদযন্ত্রে কোনো প্রোটিন ক্ষতি নির্দেশ করে—এই ধরনের নিঃশব্দ হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। কারণ এসব অ্যাটাকের উপসর্গ অত্যন্ত সূক্ষ্ম, যেমন: অবসাদ, হালকা মাথা ঘোরা বা শ্বাসকষ্ট—যা মানুষ সাধারণত অবহেলা করে।

কী এই নিঃশব্দ হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস রোগীরা কেন বেশি ঝুঁকিতে?

নিঃশব্দ হার্ট অ্যাটাক তখন ঘটে যখন হৃদপিণ্ডের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে হৃদপেশিতে ক্ষতি হয়, কিন্তু এতে প্রচলিত ব্যথার উপসর্গ দেখা যায় না। অনেক সময় রোগীরা শুধু হালকা ক্লান্তি, গ্যাস্ট্রিকের মতো অস্বস্তি বা কিছুই অনুভব করেন না। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব অ্যাটাক ধরা পড়ে না এবং পরে রুটিন হার্ট স্ক্যান বা পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসে দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তশর্করার কারণে ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’ নামক স্নায়ু ক্ষতি হয়। এর ফলে হৃদযন্ত্রের ব্যথার সংকেত স্নায়ু দ্বারা সঠিকভাবে পরিবাহিত হয় না। তাই অনেকেই বুকের ব্যথা অনুভব করেন না, এবং হার্ট অ্যাটাক বুঝতেই পারেন না।

এছাড়াও, টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো সমস্যা থাকা স্বাভাবিক, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়—নিঃশব্দ বা স্পষ্ট, দুই ধরনের জন্যই।

স্নায়ু ক্ষতির লক্ষণ যেগুলো রিস্ক নির্দেশ করে

ডায়াবেটিস রোগীদের মাঝে নিচের উপসর্গগুলো থাকলে তা স্নায়ু ক্ষতির ইঙ্গিত হতে পারে:

  • দাঁড়ালে মাথা ঘোরা বা মাথা হালকা লাগা

  • কারণবিহীন ক্লান্তি

  • প্রস্রাবের জটিলতা

  • যৌন দুর্বলতা

  • অস্বাভাবিক ঘাম (অতিরিক্ত বা একেবারেই না হওয়া)

  • পেট ফেঁপে থাকা, বমি বমি ভাব বা হজম সমস্যা

এসব উপসর্গ থাকলে ডায়াবেটিস রোগীদের দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

নিঃশব্দ হৃদরোগের সম্ভাব্য লক্ষণ

যদিও স্পষ্ট উপসর্গ থাকে না, কিছু মৃদু সংকেত দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • বুকের হালকা চাপ বা অস্বস্তি

  • ব্যাখ্যাহীন দুর্বলতা

  • ঠান্ডা ঘাম বা হাত ঘেমে যাওয়া

  • চোয়াল, গলা বা বাম বাহুতে ব্যথা

  • দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রিক বা অম্লভাব

  • সামান্য কাজেই শ্বাসকষ্ট হওয়া

এই উপসর্গগুলো সাধারণত অল্প সময় থাকে এবং অনেকেই গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যান। অথচ এসবই হতে পারে একটি নিঃশব্দ হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত।

ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক কীভাবে ধরা পড়ে?

অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারেন না যে তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধুমাত্র চিকিৎসা পরীক্ষার মাধ্যমেই তা ধরা পড়ে, যেমন:

  • ইসিজি (EKG): হৃদস্পন্দনের অনিয়ম শনাক্ত করতে

  • ইকোকার্ডিওগ্রাম: হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বিশ্লেষণে

  • রক্ত পরীক্ষা: হৃদপেশির ক্ষতির প্রোটিন শনাক্ত করতে

যদি আপনার টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকে এবং কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে এই পরীক্ষা করানো জরুরি।

উপেক্ষা করলে কী হতে পারে?

নিঃশব্দ হলেও হার্ট অ্যাটাক ক্ষতিকর। এর ফলে:

  • হৃদপেশিতে স্থায়ী ক্ষত

  • হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা হ্রাস

  • ভবিষ্যতে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

  • হৃদব্যর্থতা (Heart Failure) বাড়তে পারে

যেহেতু এটি অজান্তেই ঘটে, তাই চিকিৎসা বিলম্বিত হয় এবং জীবনঝুঁকি বাড়ে।

প্রতিরোধের উপায়: আপনি কী করতে পারেন?

টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত ও সচেতন জীবনযাপন জরুরি। কিছু করণীয় হলো:

  • খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়মিত পরীক্ষা

  • নিয়মিত হৃদরোগ পরীক্ষা করানো

  • হঠাৎ করে ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট বা হজমে সমস্যা হলে তা নজরে রাখা

  • সামান্য অস্বস্তিও চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা

প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে জটিলতা এড়ানো সহজ হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষতি কমানো সম্ভব। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা জীবন বাঁচানোর মতো জরুরি সতর্কতা।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/silent-heart-attacks-in-people-with-type-2-diabetes-heres-what-you-need-to-know/articleshow/123043116.cms

ইমরান

×