ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

৮৬ কেজি ওজন কমিয়ে ফিরে পেলেন বিশ্বাস আর জীবন, বললেন, ‘নিজেকে ঘৃণা নয়, ভালোবেসে বদলেছি জীবন’

প্রকাশিত: ২১:২৮, ১ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২১:৩০, ১ আগস্ট ২০২৫

৮৬ কেজি ওজন কমিয়ে ফিরে পেলেন বিশ্বাস আর জীবন, বললেন, ‘নিজেকে ঘৃণা নয়, ভালোবেসে বদলেছি জীবন’

ছবিঃ সংগৃহীত

 

মাত্র ২৫ বছর বয়সে ওজন দাঁড়ায় ১৮৯.৬ কেজিতে। শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক অবসাদ আর একাকিত্বে ভুগছিলেন আদিত্য সুব্রামানিয়ান। একসময় নিঃশ্বাস নিতে রাতভর ব্যবহার করতে হতো সিপ্যাপ মেশিন, রক্তচাপ ছিল অস্বাভাবিক, ফ্যাটি লিভার, প্রিডায়াবেটিস—সব মিলিয়ে জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। এরপরই শুরু হয় জীবন বদলে দেওয়ার লড়াই।

এই ওজন কমানো শুধু শারীরিক রূপান্তর নয়—এ এক আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধার আর বেঁচে থাকার গল্প।

“আমি শুধু মোটা ছিলাম না, আমি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলাম”
আদিত্য জানান, “আমার বিছানাও আমাকে দুইবার ধরে রাখতে পারেনি। রাতে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য মেশিন লাগত। খাওয়া যেন এক মানসিক আশ্রয় ছিল। কোভিডের সময় খাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছিল মানসিক ক্ষতের প্রতিফলন। আমি খেতাম দুশ্চিন্তায়, খেতাম একাকিত্বে। কিন্তু পরিপূর্ণতা কখনো আসেনি।”

বিদেশে পড়তে গিয়ে তিনি ওজন কমাতে ওষুধ ‘ওজেম্পিক’-ও ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু তা কাজে আসেনি। আর খরচও ছিল আকাশছোঁয়া।

সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছিলেন যখন গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে তাঁর বাবা-মা কোনো কথা না বলেই তাকিয়ে ছিলেন। সেই নীরবতা তাঁকে বদলে ফেলতে বাধ্য করে।

“সার্জারি ছিল অস্ত্র, শর্টকাট নয়”
ভারতে ফিরে তিনি বারিয়াট্রিক সার্জারির সিদ্ধান্ত নেন। বলেন, “এটা ওজন কমানোর জাদুকাঠি নয়, এটা ছিল বাঁচার চেষ্টা।”

কিন্তু সার্জারির পর দেওয়া ডায়েট প্ল্যান তাঁর জন্য কার্যকর ছিল না। সেটি ছিল সাধারণ, কঠোর এবং তাঁর জীবনধারার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তখনই শুরু হয় তাঁর আসল পথচলা—নিজের শরীরকে বোঝা, নিজের মতো করে খাদ্যাভ্যাস গঠন করা।

“আমি শরীরকে শাস্তি দিইনি, তাকে সঙ্গী করেছিলাম”
আদিত্য বলেন, “ওজন কমানো মানেই নিজেকে কষ্ট দেওয়া, এই ধারণা ভুল। আমি নিজেকে ঘৃণা করে নয়, ভালোবেসে বদলেছি।”

কঠিন ব্যায়াম বা উপোস নয়, বরং তিনি বেছে নিয়েছিলেন মৃদু শরীরচর্চা—হাঁটা, স্ট্রেচিং, এমনকি খারাপ দিনেও কিছু না কিছু করা। ধীরে ধীরে ফলও মিলতে থাকে—সিপ্যাপের প্রয়োজন ফুরায়, ওষুধ ছাড়তে হয়, লিভার সেরে ওঠে, রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক হয়।

“অগ্রগতি দ্রুত আসেনি, কিন্তু স্থায়ী হয়েছে”
তিন বছরে তিনি ১৮৯ কেজি থেকে নেমে এসেছেন ১০৩ কেজিতে—৮৬ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস আর নিরবিচারে আত্মচর্চার মাধ্যমে। কিন্তু এর চেয়েও বড় অর্জন, তিনি এখন নিজের শরীর ও মনকে বিশ্বাস করেন।

“এটা শুধু আমার গল্প নয়, অনেক অদৃশ্য মানুষের প্রতিচ্ছবি”
অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গিয়েছেন তিনি। এখনো জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবু তিনি বলেন, “আমি এটা করেছি নিজের মতো করে, শর্টকাট ছাড়াই। আমি চাই, আমার গল্প যেকোনো একজন মানুষের মন ছুঁয়ে যাক, যাতে সে বুঝতে পারে—সারিয়ে তোলা সম্ভব।”

আদিত্যর এ সাহসী আত্মকথন শুধু ওজন কমানো নয়, বরং সমাজে ওজন নিয়ে বিদ্রূপ, মানসিক স্বাস্থ্য আর সমর্থনের অভাব নিয়ে এক শক্ত বার্তা।

“আমার গল্পটা প্রশংসার জন্য নয়, সংযোগের জন্য” —এই কথায় তিনি শেষ করেছেন তাঁর হৃদয়স্পর্শী যাত্রার বিবরণ।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/weight-loss/from-189-to-103-kg-how-a-25-year-old-designed-his-own-diet-and-lost-86-kilos/articleshow/123030455.cms

ইমরান

×