ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

আওয়ামী লীগকে মেরে নয়, ডিরোটেট করে এগোতে হবে: রেজাউল করিম রনি

প্রকাশিত: ১২:০০, ১ আগস্ট ২০২৫

আওয়ামী লীগকে মেরে নয়, ডিরোটেট করে এগোতে হবে: রেজাউল করিম রনি

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাবনা ও রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে খোলামেলা মত প্রকাশ করেছেন। আলোচনার শুরুতে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ঘোষণা দিয়েছেন আগামী পাঁচ-ছয় দিন দেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় তিনি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “জাস্ট ওয়েট করেন, কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা শুনবেন।”

 

 

তবে রনি মনে করেন, এই সময়টাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে দেখানোর খুব একটা প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা সেকেন্ডই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিশেষ করে এই পাঁচ-ছয় দিনকে আলাদা করে খুব বেশি কিছু বলে মনে করি না। এখানে যেসব সংকট রয়েছে, সেগুলো বহুবার চর্চিত এবং জনগণেরও জানা। কিন্তু বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, আলোচনার চেয়ে কাজের ঘাটতি বেশি।”

রনি বলেন, সবচেয়ে বড় সংস্কারটি হতে পারত আওয়ামী লীগের বিচার। কিন্তু এই বিচার করা হয়েছে গণহারে হত্যা মামলার মডেলে, যেভাবে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল। এতে করে ন্যায়বিচারকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক না করে দলভিত্তিক প্রতিহিংসার রূপ দেওয়া হয়েছে, যা গণতন্ত্রের বিপরীত। এরপর শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের প্রতিযোগিতা, যেন একসময় বিএনপি-জামাতকে ‘ট্যাবু’ বানানো হয়েছিল, এখন একইভাবে আওয়ামী লীগকে বানানো হচ্ছে।

তার মতে, রাজনীতিতে ‘ক্লিনজিং’ বা নির্মূল করার নীতি প্রয়োগ করা যায় না। “আওয়ামী লীগ আমাদের ‘ইন্টিমেট এনেমি’—অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ শত্রু। একই পরিবারের ভেতরেই তিন ভাই তিন দলে ভাগ হয়ে যায়। এই বাস্তবতা অস্বীকার করে কাউকে মেরে ফেলা যাবে না। বরং সত্য ও পুনর্মিলনের (Truth & Reconciliation) প্রক্রিয়া দরকার।” তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক সমর্থক রাজনৈতিক বিভ্রান্তির শিকার এবং তারা প্রতারিতও হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ করাটাই অপরাধ নয়—ভুল হতেই পারে।

 

 

 

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একদিকে একটি রাজনৈতিক দল, অন্যদিকে একটি কালচারাল ফোর্স। কেউ ঘুষ খাওয়া স্বাভাবিক মনে করলে, অযোগ্য লোককে দায়িত্বে আনা সাফল্য মনে করলে, সমালোচনার জবাবে বট বাহিনীর গালি দিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখালে—এটাই হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক রূপ। তাই শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে নয়, সমাজকে বিশুদ্ধ করে এই সংস্কার ঘটাতে হবে।

রনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে মেরে ফেললে বা নির্মূল করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বরং তাকে গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতরেই ডিরোটেট করতে হবে। বর্তমানে রাজনীতিতে যেন সবাই আওয়ামী লীগ হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যার ফলশ্রুতিতে দেশের রাজনৈতিক অবস্থান হয়ে উঠেছে অসংলগ্ন ও কনফিউসড।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচনে শুরু থেকেই কোনো ইস্যু ছিল না।” দীর্ঘ ১৬-১৭ বছরের ভোটবিহীন শাসনের পর একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান কাঠামো ভেঙেছে। এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরার কথা বলা হলেও, সেই কাঠামো কোথায় তা স্পষ্ট নয়। নির্বাচন হওয়াটা একটা মৌলিক বিষয় হলেও জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। উল্টো, অনলাইনে হুজুগ তৈরি করে বা টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

 

 

 

এই অবস্থায় নাগরিককে ভোটাধিকার ও ক্ষমতা প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি। কিন্তু সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ—সবাই মিলেই এই শিক্ষার প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রনি। তাঁর মতে, আগামী পাঁচ-ছয় দিনে কোনো আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটবে না। যা হচ্ছে, তা অনেক পুরনো এবং পূর্বপরিচিত। এই সময়কে অতি আশাবাদ বা ভয় নিয়ে দেখার কিছু নেই। তিনি বলেন, “জুলাই সনদ, আওয়ামী লীগের বিচার, নির্বাচনের তারিখ—এসবই বহু পুরনো বিষয়। নতুন কিছু হচ্ছে না, বরং পুরনো সংকটগুলোকেই নতুন মোড়কে উপস্থাপন করা হচ্ছে।”

ছামিয়া

×