
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাই জাগরণ উৎসবে শিল্পিত পরিবেশনা
শ্রাবণের সকাল থেকেই সরব হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সেই সরবতা অব্যাহত ছিল দুপুর ও বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত অবধি। সেই সরবতার মাঝে মিশেছিল গানের সুর, কবিতার শিল্পিত উচ্চারণসহ বুহমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্রদর্শিত হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের ঘটনানির্ভর তথ্যচিত্র। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের মন রাঙাতে ছিল বায়োস্কোপের প্রদর্শনী। উদ্যানের সবুজ ঘাসে ভেসে উঠেছে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের মুখচ্ছবি। এভাবেই ছুটির দিনে বৈচিত্র্যময়তার আলিঙ্গনে মুখরিত হয়ে ওঠে এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষ্যবহ এই আঙিনা। শুক্রবার ছুটির দিনে এখানে শুরু হলো চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্মৃতিতাড়িত জুলাই জাগরণ সাংস্কৃতিক উৎসব। চার দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজক সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী।
দুই অধিবেশনে বিভক্ত ছিল প্রথম দিনের আয়োজন। কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উৎসব উদ্বোধন করেন জুলাই অভ্যুত্থানের একমাত্র সাংস্কৃতিক কর্মী উচ্চারণ শিল্পীগোষ্ঠীর সহকারী পরিচালক শহীদ আব্দুল্লাহ আল তাহিরের মা শিরিনা বেগম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বক্তব্য দেন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। এছাড়াও বক্তব্য দেন ২০১২ সালে গুমের শিকার হওয়া সাংস্কৃতিক কর্মী মোকাদ্দাস হোসেনের পিতা আব্দুল হামিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, জুলাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র এক বিস্ফোরণ; জুলাই প্রতিবাদের প্রবল উচ্চারণ। জুলাই আমাদের চেতনা, জুলাই আমাদের প্রেরণা। চব্বিশের জুলাইয়ে আবারও আমাদের তরুণরা রক্তস্নাত এ পলল ভূমিতে মুক্তির বীজ বপণ করেছেন। দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছে জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ মৃত্যুই সেখানে শেষ কথা নয়। ‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যুÑসময়ের সাহসী এ অঙ্গীকারকে ধারণ, পালন ও লালন করেই আমাদের তরুণরা সাফল্যের এক মহাকাব্য রচনা করেছে জুলাইয়ে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আরোপিত কালচারাল হেজিমনির ফ্রেম ভেঙে দিয়ে দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
শফিকুল আলম বলেন, জুলাইয়ে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। যদি আমরা ‘জুলাই’কে ধারণ করতে না পারি, তবে আবারও আওয়ামী লীগের মতো নতুন শাসকগোষ্ঠী বাংলার বুকে গড়ে উঠবে। তাই ‘জুলাইয়ের চেতনা’ বুকে ধারণ করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই সরকার বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে। আমাদের ব্যর্থতা হলো, এখনো কোনো হত্যাকারীকে ফাঁসিতে ঝোলাতে পারিনি। অনেকে এখন ক্রেডিট নেওয়ার রাজনীতি করছে, কিন্তু এই আন্দোলনে কেউ ক্রেডিটের জন্য আসেনি। সবাই এসেছে ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করতে। আমরা জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ব।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শহীদদের নিবেদিত সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী হাদিউজ্জামান বুলবুল। ‘মিনারের সুর’ শীর্ষক ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন সাইমুমের শিশু বিভাগের শিল্পী সামিন হাসান। এরপর প্রদর্শিত হয় জুলাই অভ্যুত্থানে মাদ্রাসা ও আলেম সমাজের অবদানের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি। ‘অমায়িক ব্যবহার’ শিরোনামের ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন সাইমুম হোসাইন। অধিবেশনের প্রথম পর্বে প্রদর্শিত হয় জুলাইনির্ভর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন দিশারীর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘শোক প্রান্তর’। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় উপস্থাপিত হয়েছে জুলাই আন্দোলনে সাড়া জাগানো গান, কবিতাসহ নানা কিছু । শ্রোতার হৃদয়ে আলোড়ন তুলে পরিবেশিত হয়েছে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর জাগরণমূলক ইসলামি সংগীত ‘বইছে বাতাস বৈরি’।
আগামী সোমবার পর্যন্ত চলবে এই সাংস্কৃতিক উৎসব। সকালে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা। বিকাল থেকে শুরু গান, আবৃত্তি, মঞ্চনাটকের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
প্যানেল