
একজন নারীর পূর্ণতা আসে মাতৃত্বে। প্রথম মা হওয়ায় অনুভূতি প্রতিটা মেয়ের কাছেই বিস্ময়ের, চিরস্মরণীয়। ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে এত কষ্ট সহ্য করেও সে অনাগত সন্তানকে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর হয়, নাড়ি ছেঁড়া ধন! প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব আর সাধনার। সন্তানকে কীভাবে কোলে নেবে, সাজাবে, কেমন করে খাওয়াবে, ঘুম পাড়াবে, আদর করবে- এসব ভাবনা তাকে ঘিরে রাখে সারাক্ষণ। এমনকি সঠিক পুষ্টির বিষয়েও আগে থেকে সবকিছু জেনে নেয়। মনের ভেতর প্রতিধ্বনিত হয় চিরচেনা সেই বাক্য- আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। দুইবেলা খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করেন যে বাবা-মা, তারাও এমনি ভাবেন।
প্রতি বছর ১-৭ আগস্ট পালন করা হয় বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। সচেতন করা হয় শিশুর জন্য মায়ের দুধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ এর মতে- শিশুর জন্মের পর পুরো ৬ মাস শুধুই মায়ের দুধ পান করানো উচিত। আর জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের শাল দুধ শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মায়ের দুধ তাড়াতাড়ি আসে। ৬ মাস বয়সী শিশুকে প্রতিদিন ৮-১২ বার দুধ খাওয়ানো উচিত। মায়ের বুকের দুধেই রয়েছে শিশুর পরিপূর্ণ পুষ্টি, যা তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মানসিক বিকাশে সহায়তা করে এবং শিশুমৃত্যুর হার কমায়। এটি প্রতিটি শিশুর জন্মগত অধিকারও। এছাড়া দুধ পান করানো মায়েরও রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে মায়ের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে সহায়তা করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, মাতৃত্বজনিত নানা জটিলতা দূর করে। এ সময় মাকেও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণও জরুরি যা শিশুর জন্য পর্যাপ্ত দুধ আসতে সহায়ক।
ঘরে থাকা মায়েরা শিশুর জন্মের পর টানা ২ থেকে আড়াই বছর নিয়ম করে নিজের দুধ দিতে পারলেও কর্মজীবী মায়েদের ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয় না। কারণ সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃদুগ্ধ কর্ণার নেই, সন্তান নিয়ে অফিস করার ব্যবস্থাও নেই। এমনকি মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, টার্মিনাল কোথাও মাতৃদুগ্ধ কর্ণার নেই। হঠাৎ ২/১ জায়গায় পাওয়া গেলেও সর্বত্র এটি থাকা অত্যন্ত জরুরি। বসুন্ধরা শপিংমলে মেয়েদের নামাজের জায়গার পাশেই রয়েছে একটি মা ও শিশু কর্ণার। প্রতিটি জায়গায়ই এমন একটি কক্ষ থাকা জরুরি। বর্তমানে চাকরিজীবি মেয়েদের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তার জন্যে সব প্রতিষ্ঠানেই একটি মা ও শিশু কর্ণার থাকা আবশ্যক। চাইলেই মা ও শিশুর জন্য আলাদা করে ছোট একটি কক্ষ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে রাখা যায়। এতে চাকরিজীবী মা কাউকে সঙ্গে করে এনে সেখানে তার সন্তানকে রেখে সময়মতো দুধ পান করাতে পারেন। অন্তত ১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে কাছে রাখার ব্যবস্থা থাকলে কোনো মাকে আর সন্তান লালন পালনের জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে হয় না। শিশুকে সঙ্গে রেখে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। এমনকি ডে কেয়ার সেন্টারের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। ফলে বেশির ভাগ মেয়েরই সন্তান জন্মের পর তাদের লালন পালনের জন্য উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় পেশাগত জীবন গৃহকোণে নীরবে নিভৃতে শেষ হয়ে যায়।
প্যানেল/মো.