
সমতাভিত্তিক সমাজ তৈরিতে বাংলাদেশের এগিয়েও বদলে যাওয়া নতুন অবয়বের আরও এক নিরবচ্ছিন্ন কর্মযোগ সামনে চলার গল্প সত্যিই চমকপ্রদ। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারী শিক্ষা জোরদার হচ্ছে নিঃসন্দেহে। কর্মজীবী নারীর সংখ্যাও এখন হাতেগোনার অবস্থায় নেই। অফিস, আদালত, শিল্প-কারখানা এমনি উদ্যোক্তা তৈরি হতেও পেছনের দিকে তাকাচ্ছে না। আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির অনন্য এই উর্বর পলিমাটির দেশ ধনে ধান্যে পুষ্পেভরা এক উর্বর বরেন্দ্র অঞ্চল। বর্তমানে সফল ব্যবসায়িক কর্মযোগে দেশের নিরন্তর অভিগমন এক অনবদ্য যাত্রা পথ। সমসংখ্যক নারী যদি তেমন গতিবেগে সমানের দিকে অগ্রসর হতে পিছু হটে তাহলে দেশকে সার্বিক উন্নয়ন যাত্রা অর্জন করতে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে। সেখানে শুধু নারী শিক্ষাই জরুরি নয় বরং বৈচিত্র্যময় কর্ম সাধনায় তাদের এগিয়ে চলাও সময়ের ন্যায্যতা। পুরানো পাতলা কাপড় দিয়ে তৈরি নানা মাত্রিক হস্তশিল্পের সুচারু বুনন দক্ষতা বঙ্গ ললনাদের চিরায়ত ঐশ্বর্যগাথা এক অনন্য কারুকার্য তো বটেই। কাঁথা শিল্পে বঙ্গরমনীদের জুড়ি নেই তেমন প্রবাদ বাক্য আজও গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে। এবার উঠে এসেছে নদীমাতৃক বাংলার বরিশাল জেলার নারী বুনন শিল্পীদের তৈরি হাত ব্যাগের বহুমাত্রিক আয়োজন। নদী, নালা, খাল এই নিয়ে বরিশাল এমন বাস্তব শ্লোকবাক্য আজও সমৃদ্ধ অঞ্চলটিকে ঘিরে রেখেছে। ভরা ইলিশের সমৃদ্ধতায় যে বরিশাল নজরকাড়া সেখানে নারীদের হস্তশিল্পের নিত্যনতুন দ্যোতনা সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে, সাথে নারী কারুশিল্পীর স্বয়ংম্ভর হবার গল্পও গণমাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে। ঘরে বসেই বাড়ির পুরানো কাপড়ে বুনন দক্ষতায় শৈল্পিক মাহাত্ম্যে নিজেরা যেভাবে তৈরি হচ্ছে তাও এই বরেন্দ্র অঞ্চলের সৃষ্টি দ্যোতনার নবতর আধুনিক সংযোজন। পুরাকালের বুনন দক্ষতা সময়ের জোয়ারে আবারও ঐতিহ্যিক ভাবসম্ভারকে নতুন অবয়বে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত। সেখানে এগিয়েই থাকছে অধিকারবঞ্চিত নারীদের আপন বৈভবে তৈরি হয়ে উপার্জনক্ষম হওয়ার অনন্য গল্প। পুরানো কাপড়ে নকশা করে কাঁথা সেলাই করার গল্পকথা আজও সময়ের আবেদন যুগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে নবতর অবয়বে পুরানো কাপড় দিয়ে নারীদের জন্য ব্যাগ তৈরি করা কম সৌভাগ্য নয় কিন্তু। সৃষ্টির আনন্দের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকছে চাহিদা আর ব্যবসা বাণিজ্যের অভাবনীয় সম্ভার। অপন মনের মাধুরি মিশিয়ে বুনন শিল্পে মনসংযোগ সুবিধাবঞ্চিত অসহায় রমনিদের যেভাবে স্বপ্নের জগৎকে উন্মোচন করে যাচ্ছে তাও শিল্পপ্রযুক্তির আধুনিক বলয়ের অপার বয়ন দক্ষতা, সক্ষমতা। বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পাদদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা এমন শৈল্পিক অভিনবত্বে বাহারি হাত ব্যাগের নির্মাণশৈলীর দক্ষতাকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসছে। তার ওপর বাজার অর্থনীতির দরজায়ও কড়া নাড়তে কোনোভাবেই বেগ পাচ্ছে না। এমনিতেই আমাদের গ্রামীণ নারীরা হস্তশিল্পের বিভিন্ন আয়োজনে তাদের সক্ষমতাকে গ্রাহকের নজর কাড়তে সামনের দিকে এগিয়েই চলেছে। অধিকারবঞ্চিত নারীদের এমন কর্মসাফাল্যে তারা যেমন আনন্দিত উচ্ছ্বসিত। একইভাবে গ্রাহকের কাছে সে আবেদনও গ্রহণযোগ্যতার কাতারে অভিষিক্ত হচ্ছে। অলস সময় অপচয় না করাই শুধু নয়, স্বপ্ল পুঁজিতে বৃহৎ কর্মপ্রবাহকে চালিয়ে নিতে পারাও কম দক্ষতা কিংবা পারদর্শিতা নয়। বরিশাল জেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও এমন মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানানোই নয় বরং প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা দিতেও এগিয়ে আসার চিত্র স্বস্তিদায়ক এবং নজরকাড়া। গ্রামনির্ভর বাংলাদেশের পল্লী জননীর কোলে সযত্ন-স্নেহে লালিত পিছিয়ে পড়া নারীদের সামনে এগিয়ে চলার গল্প যেমন চমকপ্রদ, প্রশংসনীয় একইভাবে পিছিয়ে নারী ও দেশের কল্যাণকর পরিস্থিতি তৈরিতে স্বপ্ন-পূরণ আর জয়ের সম্ভাবনা তো জেগেই থাকছে। এমন করে পুরো বাংলাদেশ শুধু শস্য, শ্যামল নয়। শিক্ষায়, ঐতিহ্যিক সম্ভারে পুনর্জাগরণ তৈরি করা যেন শাশ্বত বাংলা আর আধুনিক ও প্রযুক্তির চিরায়ত বঙ্গভূমি চিরস্থায়ী মিলনসৌধের পরম নির্মাল্যে সামনের দিকে ছুটবে।
প্যানেল/মো.