
৩০ জুলাই রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে ৮.৮ মাত্রার এক প্রবল ভূমিকম্প আঘাত হানে। এমন মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে আনে এবং সুনামির শঙ্কা সৃষ্টি করে। বাস্তবেও তা হয়েছিল, ভয় ছড়িয়ে পড়ে সুনামি সতর্কতায়, নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ মানুষকে।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে, বিপুল শক্তির এই ভূমিকম্পের পর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ছিল খুবই সীমিত। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, কেন এত বড় ভূমিকম্প হয়েও রাশিয়ায় বড় ধরনের ধ্বংস হয়নি?
নিচে ভূতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো, যা এ প্রশ্নের জবাব দিতে সাহায্য করে:
১. ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল তুলনামূলকভাবে কম
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২০.৭ কিলোমিটার গভীরে। এই অগভীর গভীরতা সুনামি সৃষ্টিতে সহায়ক হতে পারে ঠিকই, কিন্তু যদি প্লেট মুভমেন্ট অনুভূমিক হয় বা সমুদ্রতলের পরিবর্তন সামান্য হয়, তাহলে সুনামির মাত্রা কম থাকে। এবার ঠিক সেটাই ঘটেছে।
২. ভূমিকম্পের উৎসস্থলে প্লেট সরে গেছে অনুভূমিকভাবে, উল্লম্ব নয়
সুনামি সাধারণত সৃষ্টি হয় তখন, যখন একটি টেকটোনিক প্লেট হঠাৎ করে উল্লম্বভাবে সরে গিয়ে উপরের পানিকে ধাক্কা দেয়। তবে ভূমিকম্পে প্লেটের মুভমেন্ট ছিল অনেকটা অনুভূমিক, অর্থাৎ পাশ থেকে ঘষে যাওয়ার মতো। ফলে বিশাল পানির স্তম্ভকে উঁচু করে তোলার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি, যা একটি বড় সুনামির জন্য জরুরি।
৩. সুনামির তরঙ্গ তৈরি হলেও গভীর সমুদ্রে তা ছড়িয়ে পড়ে
রাশিয়ার পূর্ব উপকূল ঘেঁষা কামচাটকা উপদ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগরের 'প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার'-এর অংশ। এখানে সমুদ্র গভীর হওয়ায় ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট তরঙ্গ (সুনামি) গভীর পানিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু উপকূলের কাছে পৌঁছানোর আগে তার গতি কমে যায় এবং ঢেউও অনেকটা শক্তি হারায়।
৪. উপকূলীয় ভূগঠনের কারণে সুনামি দুর্বল হয়
ইউনিভার্সিটি অফ সাউথটনের অধ্যাপক লিসা ম্যাকনিল বলেন, সুনামির ঢেউয়ের আঘাতের মাত্রা অনেকাংশে নির্ভর করে উপকূলের ভৌগোলিক গঠনের ওপর। যদি উপকূলের ঢাল বেশি হয় এবং তলদেশ ধাপে ধাপে গভীর হয়, তাহলে ঢেউ অনেকটাই বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং শক্তি হারায়। কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলের অনেক জায়গায় ঠিক এমন ভূগঠন রয়েছে।
৫. জনবসতির ঘনত্ব কম, প্রস্তুতিও ছিল সময়োচিত
ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে প্রস্তুতি অনেক আগেই গৃহীত হয়ে থাকে। সুনামি সতর্কতা কার্যকর হওয়ায় দ্রুত লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় বড় ক্ষতি হয়নি।
৬. পূর্বের সুনামি থেকে শিক্ষা
২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে এবং ২০১১ সালে জাপানে যে বিপর্যয় ঘটেছিল, তার ফলে সুনামি পূর্বাভাস ও প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থায় বিশ্বজুড়ে উন্নতি হয়েছে। রাশিয়ার প্রশাসনও এই ধরনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এখন অনেক বেশি অভিজ্ঞ, যার ফল মিলেছে এবারের পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
Jahan