
হতাশ হয়ে ফিরছেন জেলেরা
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড-সন্দ্বীপ চ্যানেলে ভরা মৌসুমেও নেই কাঙ্খিত ইলিশ। প্রতি বছর এই সময়ে যখন ইলিশের ঢল নামে, তখন জেলেদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টো। সামান্য যে ইলিশ ধরা পড়ছে, তা দিয়ে জ্বালানি খরচও উঠছে না। হতাশ হয়ে ফিরছেন জেলেরা, অনেকে আবার বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাই করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সন্দ্বীপ চ্যানেলে ইলিশ কমে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্তত চারটি কারণ দায়ী। উপজেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশ ধরা পড়েছিল ১,৪৫৫.৯২ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২,০৩১.৭৫ টন। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হঠাৎ করে তা কমে আসে ৭৩৫.৭৩ টনে। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধরা পড়েছে মাত্র ২৩৩.৫ টন ইলিশ। এর মধ্যে শুধুমাত্র সীতাকুন্ডে ধরা পড়েছে ২৩০.১ টন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪০৩ টন কম। সীতাকুন্ড উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার জেলে পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলে পরিবারের সংখ্যা ৫,৪০০। নৌকা রয়েছে ১,৬০০টি। ইলিশ মৌসুমে অন্য উপজেলা থেকেও প্রায় ৫০০ জন অতিরিক্ত শ্রমিক এসে কাজে যোগ দেন। সীতাকুন্ডের কুমিরা ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি মাছ ধরার নৌকা ফিরছে ঘাটে। জেলেরা নামছেন মলিন মুখে। জেলে সরদার বিপ্লব জলদাস বলেন, ইলিশের মৌসুমে আমি ৫-৭ জন জেলে রাখি। এবারও রেখেছিলাম। কিন্তু খরচের তুলনায় মাছ না পাওয়ায় ৪ জনকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছি। পাইকার অনিল জলদাস বলেন, আমার তিনজন শ্রমিক নৌকায় উঠে মাছ কেনেন। তাদের মজুরি, নাশতা এবং বরফের খরচ মিলিয়ে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা লেগে যায়। কিন্তু ইলিশ না থাকায় খরচও উঠে আসে না। জেলেরা জানান, প্রজনন মৌসুমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা শেষে তারা বুকভরা আশা নিয়ে সাগরে নামেন। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় তারা পড়েছেন চরম সংকটে। অনেকেই মহাজনের দাদন ও এনজিওর কিস্তির চাপে দিশেহারা। দোকানের বকেয়া, সন্তানদের পড়াশোনা, সংসার খরচ—সবকিছু মিলিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। অন্য বছর যেখানে ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হতো কেজি প্রতি ১০০-১৫০ টাকা, এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকায়। ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১,০০০ টাকা, আর ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,২০০-১,৪০০ টাকায়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ বছর আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। তাছাড়া গত দুই সপ্তাহ ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরা কার্যত বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহনেওয়াজ ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ার চারটি কারণ তুলে ধরে বলেন, উজান থেকে নেমে আসা নদীর পানির গতি ও প্রবাহের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়েছে, যা ইলিশের প্রজননে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে সাগরের পৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়েছে, যা ইলিশের চলাচলের পথে বাধা তৈরি করছে। সাগরে ইলিশের স্বাভাবিক আবাসস্থল ব্যাহত হওয়ায় তারা উপকূলের দিকে আসছে না। পূর্ববর্তী বছরগুলোতে অতিরিক্ত আহরণের ফলে ইলিশের সংখ্যা কমে গেছে।
প্যানেল