ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

বাদুড় দিতে পারে ক্যানসারের ওষুধ!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২০, ১৬ জুন ২০২৫

বাদুড় দিতে পারে ক্যানসারের ওষুধ!

ছবি: সংগৃহীত

অন্ধকারে ডানা মেলে উড়ে চলে যাওয়া বাদুড়কে আমরা সাধারণত ভয় পাই। কেউ কেউ ভাবে, এটি রোগ ছড়ায়, কেউ বলে অপয়া। কিন্তু জানেন কি? এই ‘অপ্রিয়’ বাদুড়ই হতে পারে মানবজাতির দীর্ঘজীবনের চাবিকাঠি!

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাদুড় একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম, যারা শত শত ভাইরাস শরীরে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, অথচ ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ তাদের ছুঁতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ এই তথ্য।

গবেষকরা জানিয়েছেন, বাদুড়ের শরীরে p53 নামের ক্যানসার প্রতিরোধী জিনের একাধিক শক্তিশালী সংস্করণ রয়েছে। যেখানে মানুষের দেহে থাকে মাত্র একটি p53, সেখানে বাদুড়ের দেহে আছে এর দুইটি উন্নত রূপ। এই জিন ক্যানসারের কোষ জন্ম নেওয়ার আগেই সেটিকে ধ্বংস করে দেয়।

বিশেষ করে ‘লিটল ব্রাউন ব্যাট’ নামের ছোট বাদুড় প্রায় ৩৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে, অথচ ওজন মাত্র আধা আউন্স! মানুষের হিসেবে এটি প্রায় ১৮০ বছর বাঁচার সমান।

বাদুড়ের ইমিউন সিস্টেমও অবাক করার মতো। এটা ঠিক যতটা প্রয়োজন, ঠিক ততটাই কাজ করে। অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায় না, ফলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হয় না—যেটি সাধারণত বার্ধক্যের সঙ্গে ক্যানসারের অন্যতম কারণ।

আমাদের দেহে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষের প্রান্তে থাকা টেলোমিয়ার নামের অংশ ছোট হতে থাকে। কিন্তু বাদুড়ের দেহে এটি হয় না। তাদের কোষে টেলোমেরেজ নামক এনজাইম সারাজীবন ধরে টেলোমিয়ার ঠিকঠাক রাখে। অর্থাৎ, কোষ যেন কখনো বুড়ো হয় না!

তবে শুধু এই এনজাইম থাকলেই হয় না—পাশাপাশি থাকতে হয় ‘p53’ এর মতো নিয়ন্ত্রক, যা কোষকে মাত্রাতিরিক্ত বিভাজন করলে থামিয়ে দেয়। এই ভারসাম্যটাই বাদুড়কে বানিয়েছে প্রকৃতির বিস্ময়।

বিজ্ঞানীরা এখন বাদুড়ের জিনগঠন এবং কোষীয় প্রক্রিয়া অনুকরণ করে ওষুধ তৈরি করার পথে এগোচ্ছেন। গবেষণার অর্থায়ন করেছে National Institute on Aging, কারণ এতে বার্ধক্য ও ক্যানসার উভয়ের প্রতিকারে সম্ভাবনা রয়েছে।

যদি বাদুড়ের মতো ‘স্মার্ট কোষ-নিয়ন্ত্রণ’ পদ্ধতি মানুষে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন এক পৃথিবী কল্পনা করা যায় যেখানে ক্যানসার হবে একটি অতীতের রোগ!

বড় প্রাণীদের মধ্যে হাতি, তিমি ও নেকেড মোল র‌্যাটের শরীরেও রয়েছে নিজস্ব ক্যানসার প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কিন্তু বাদুড়ের পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং কার্যকর—যা আজ চিকিৎসা ও বার্ধক্য গবেষণায় এক বিপ্লব এনে দিতে পারে।

বাদুড় নিয়ে কুসংস্কার ছড়ালেও প্রকৃতি তার মাঝে লুকিয়ে রেখেছে ভবিষ্যতের চিকিৎসাবিজ্ঞানের চাবিকাঠি। গবেষকরা বলছেন, “যদি মানুষ বাদুড়ের মতো কোষ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে, তাহলে হয়তো একদিন ১০০ বছর বয়সে আমরা টিউমারহীন জীবন নিয়ে বাঁচতে পারব।”

মুমু ২

×