ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

আলফাডাঙ্গায় হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং!

আরিফুজ্জামান চাকলাদার, আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১৬ জুন ২০২৫

আলফাডাঙ্গায় হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং!

জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। শুরু হয় সড়ক সংস্কারের কাজ। কিন্তু কাজ শুরুর দুই দিন যেতে না যেতেই হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে সেই সড়কের কার্পেটিং।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নে গত রোববার (১৫ জুন) একটি সড়ক সংস্কারের চলমান কাজে দেখা গেছে এমন চিত্র। কাজ শুরুর পরপরই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। গাড়ির চাকার ঘর্ষণে উঠে যাচ্ছে পিচ, এমনকি ছোট বাচ্চারাও হাতে টেনে কার্পেটিং তুলে ফেলছে। এসব অনিয়মের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।

উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাচুড়িয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা থেকে বেড়িরহাট বাজার পর্যন্ত ৩৭০০ মিটার সড়ক উন্নয়নের প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৩০০ মিটার সড়ক ১০ ফুট এবং ২৪০০ মিটার সড়ক ১৩ ফুট চওড়া হবে। চুক্তি অনুযায়ী কাজটি পেয়েছে ফরিদপুরের মাহামুদ ট্রেডার্স। ১৪ জুন বিকেলে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল রাজ্জাক রাসেল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সড়কের এই বেহাল দশা। এলজিইডি’র নজরদারির ঘাটতির সুযোগে দায়সারা কাজ হয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, বর্ষা মৌসুমে এ সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে।

জানা যায়, পাশের বোয়ালমারী উপজেলার ভাটপাড়া এলাকার ইকরাম হোসেনের ইটভাটায় কার্পেটিং কাজের মেশিন বসানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রকল্পস্থলের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। প্রকল্প এলাকায় নেই কোনো সাইনবোর্ড, যা নিয়ম অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। এতে সাধারণ মানুষ সঠিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না।

সরেজমিনে ভেন্নাতলা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার কার্পেটিং বিভিন্ন জায়গায় উঠে গেছে। শিশুরা তা তুলে নিয়ে খেলছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, কাজ শুরুর পর থেকেই ধুলাবালি পরিষ্কার না করেই বিটুমিন ছাড়া কার্পেটিং করা হয়েছে। এর মাঝে বৃষ্টির মধ্যেও নিম্নমানের কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে অফিসের লোকজনকে ‘ম্যানেজ’ করে ঠিকাদার কাজ চালিয়ে গেছেন।

পিকআপচালক সাগর বলেন, ‘‘হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে। কতটা দুর্নীতি হলে রাস্তাটি এমন হয়! রাস্তার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এমন হচ্ছে।’’

তদারক কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল রাজ্জাক রাসেল বলেন, ‘‘আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছি। এলাকাবাসীর দাবি—প্রাইম কোড মেরে সাথে সাথে কাজ করতে হবে, না হলে রাস্তার পিচ উঠে যাবে। আর সাদা পাথরের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, মেশিনের পাশে ২–৪টি সাদা পাথর পড়লে তাতে গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।’’

ঠিকাদার মাহামুদ মোবাইলে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘‘রাহাত ভাইয়ের হাতে ১০০ নয়, ১১০% কাজ করছি। এলাকার লোক পিচের নিচে সাবল ঢুকিয়ে রাস্তা নষ্ট করেছে। ভালো মানের রাস্তা নষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।’’

উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী রাহাত ইসলাম বলেন, ‘‘জুন মাসের শেষে অফিসে ব্যস্ত থাকায় আমার উপসহকারী কাজ করছে। আমি শুনেছি সেখানে তিন–চারশ লোক আমাদের অফিসারদের ঘিরে হেনস্তা ও মারধর করেছে। তবে অভিযোগ সত্য নয়। রাস্তার গুণগত মান ঠিক আছে। কার্পেটিং শক্ত হতে ৭২ ঘণ্টা সময় দরকার। ঠিকাদার ত্রুটি করলে আমাদের জানালে পুনরায় কাজ করানো হবে। কিন্তু গায়ে পড়ে মারধর হলে আমরা নিরাপদে কাজ করতে পারব না।’’

ফরিদপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘‘ঐ এলাকার লোকজন কোদাল দিয়ে রাস্তা উঠিয়ে ফেলেছে। আমি দুই বছর ধরে জানি আমার উপজেলা অফিসার একজন সৎ কর্মকর্তা। আজকেও সেখানে অফিসার এবং ইউএনও গিয়েছেন। আপনারা গিয়ে খোঁজখবর নিন এবং ওদের বিরুদ্ধে লিখুন।’’ অনিয়মের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আপনার যা খুশি লিখবেন।’’

সানজানা

×