ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

পাঁচ বছরেও পাননি ক্ষতিপূরণের টাকা

পটিয়ায় লবণ শিল্পের মালিক দেউলিয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১৬ জুন ২০২৫

পটিয়ায় লবণ শিল্পের মালিক দেউলিয়া

উচ্ছেদের ৫ বছর পরও অধিগ্রহণ ও ক্ষতি পূরণের টাকা দেওয়া হয়নি লবণ শিল্প মালিকদের

ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় চট্টগ্রামের পটিয়ায় লবণ শিল্পের বেশ কয়েকজন মালিক দেউলিয়া হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে করিম সল্ট ক্রাশিং অ্যান্ড রিফাইনারী ইন্ডাস্ট্রিজ ও উম্মে আমান সল্টের মালিকপক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এ দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণের ২৫০ কোটি টাকা দাবি করেন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের পটিয়া ইন্দ্রপুল ব্রীজ ও রাস্তা সম্প্রসারণ প্রকল্পের কথা বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বেশকিছু লবণ শিল্প কারখানা উচ্ছেদ করেছিল। এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বেকার হয়ে পড়েছে লবণ শিল্পের কয়েক হাজার শ্রমিক। ইন্দ্রপুল ব্রিজের পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে করিম সল্ট ও ব্রিজের উত্তর পাশে রয়েছে উম্মে আমান সল্টের কারখানা। সবচেয়ে বড় কারখানা এ দু’টি। ২০২০ সালে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে জোরপূর্বক লবণ মিল মালিকদের এখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়। এসব শিল্প কারখানার মালিকরা ব্যাংক লোনে জর্জরিত। একদিকে ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়া ও অন্যদিকে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মিল মালিকরা এখন দেউলিয়া। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের কথা বলে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এসব মিল মালিকদের উচ্ছেদ করেন। উচ্ছেদের পূর্বে মিল মালিকদের নোটিশ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র ১৯৫৪ সালে অধিগ্রহণ থাকার কথা বলে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
মিল মালিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান সড়কের পটিয়া ইন্দ্রপুল ব্রিজ এলাকায় দেশের বৃহৎ লবণ কারখানা গড়ে ওঠে। একসময় ছোট বড় ৫০টির মত লবণ কারখানা থাকায় দেশের মোট লবণের চাহিদার এক তৃতীয়াংশ এখান থেকেই পূরণ হতো। ২০২০ সালে হঠাৎ উচ্ছেদ করা হয় বেশকিছু লবণ কারখানা। ব্রিজ নির্মাণ ও সড়ক সম্প্রসারণের সময় এসব শিল্প কারখানা উচ্ছেদ করার পর বর্তমানে ১৫-১৬টি লবণ কারখানা চালু রয়েছে। মিল মালিকদের দাবি, লবণ কারখানার মালিকরা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্ল্যান্ট স্থাপন করে উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহে অগ্রসর হয়েছিল। এর মধ্যে সওজ কর্তৃপক্ষ ব্রিজ ও সড়ক সম্প্রসারণ করার কথা বলে বেশকিছু কারখানা উচ্ছেদ করে। উচ্ছেদের কারণে আল্লাই সল্ট, জালালাবাদ সল্ট, মর্ডান সল্ট, করিম সল্ট, উম্মে আমান সল্ট, ফরহাদ সল্ট, শাহচান্দ অটো রাইচ মিল, মর্ডান রয়েল সল্ট, চান্দখালী সল্ট, হাজী রফিকুল ইসলামের অফিস, দ্বীন সল্টসহ ১৪টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে করিম সল্ট ক্রাশিং অ্যান্ড রিফাইনারী ইন্ডাস্ট্রিজ ও উম্মে আমান সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকায় তাদের ২টি বৃহৎ লবণ কারখানা ছিল। যা ২০২০ সালে সওজ কর্তৃপক্ষ ব্রিজ ও সড়ক সম্প্রসারণের কথা বলে জোরপূর্বক গুড়িয়ে দিয়েছে। এতে তাদের ২৫০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও দীর্ঘ ৫ বছরেও অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের টাকা তারা পাননি। নিরুপায় হয়ে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের টাকা বকেয়া থাকার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এ বিষয়গুলো মূলত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের এলএ শাখা দেখেন। বৈধ কাগজপত্র থাকলে ক্ষতিপূরণের টাকা অবশ্যই পাবেন।

×