
ছবিঃ সংগৃহীত
তীব্র এই গরমের সময় শিশুদের সবচেয়ে সুস্বাদু ও লোভনীয় খাবার আইসক্রিম, আইস ললি। তাই কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বিষাক্ত কেমিক্যাল, নোংরা পানি, চিনির পরিবর্তে সেকারিন এবং বিভিন্ন প্রকার কাপড়ে ব্যবহারের বিষাক্ত রং মিশিয়ে সস্তা আইসক্রিম জাতীয় খাদ্য বাজারে বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করেন।
শিশুদের নজর কাড়তে আইসক্রিমে মেশানো হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর রং। সাদা রঙের আইসক্রিমকে দুধের মালাই আইসক্রিম বলে বিক্রি করা হচ্ছে। মূলত আইসক্রিমে নেই কোনো প্রকার দুধের ছিটেফোঁটাও। দুধ মালাই আইসক্রিমে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যবহার এরারুট। যা গার্মেন্টসের নতুন কাপড়ে ব্যবহার করা হয়।
অভিভাবকরা তাদের আদরের সন্তানকে এর ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা না করেই প্রতিনিয়ত খাওয়াচ্ছেন এই অস্বাস্থ্যকর সুস্বাদু খাদ্য।
অন্যদিকে আরেক প্রকার অসাধু ব্যবসায়ীরা শিশুদের কাছে এটাকে আরো আকর্ষণীয় করার জন্য কাপড়ে ব্যবহারের বিভিন্ন বিষাক্ত রং মিশিয়ে এটাকে রঙিন করে বিক্রি করছে কোমলমতি শিশুদের কাছে।
বর্তমানে আইসক্রিমের বিপরীতে একি বিষাক্ত ও কেমিক্যাল যুক্ত খাবার ভিন্ন আকার ও মোড়কে বাজারে প্রক্রিয়াজাত করছেন যার নাম দেওয়া হয়েছে আইস ললি। এটিও আইসক্রিমের উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এক কথায় যাকে বলে 'নতুন মোড়কে পুরাতন মদের বাজারজাতকরণ'। এসব মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত, তবে শিশুদের কাছে খুবই সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় খাদ্য হিসেবে বর্তমানে প্রতীয়মান হচ্ছে। এছাড়াও আছে আইস পপ, আইস পান্ডা, আইসবার সহ বিভিন্ন প্রকার ভেজাল খাদ্য।
শিশুরা এসব ভিন্ন ভিন্ন রং ও ফ্লেভারের আইসক্রিম, আইস ললির প্রতি যেন দিনে দিনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। চিনির ব্যাবহারের পরবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে সেকারিন। এটিও শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বিষাক্ত রাসায়নিকে তৈরি আইসক্রিম কেবল শিশুরাই নয়, সঙ্গে বড়রাও খাচ্ছেন না জেনেই। আর আইসক্রিমের এসব রাসায়নিকের প্রভাবের কারণে মানবদেহের সব সিস্টেমের উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও।
বর্তমানে শহর এবং গ্রাম, পাড়া মহল্লার আনাচে - কানাচে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য সস্তা আইসক্রিমের কারখানা। নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শিশুদের টার্গেট করে গড়ে ওঠা এসব কারখানার বেশিরভাগেরই নেই কোন সরকারি অনুমোদন। তবুও দাপটের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে অনায়াসে। দেখেও যেন দেখার কেউ নেই। তবে বেশিরভাগ বিক্রি হয় প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুল, মাদ্রাসা, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আশেপাশের দোকানগুলোতে। অনেক সচেতন অভিভাবকরা জানেনই না তাদের সন্তানরা টিফিনের টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাচ্ছে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি আইসক্রিমে উৎপাদন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক সব পদার্থ। প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর রং, নোংরা পানি, এরারুট ও লেবেলবিহীন ফ্লেভার। পাশাপাশি এসব কারখানাগুলো তাদের আইসক্রিমের মোড়কের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীণের তারিখ না দিয়ে বিক্রি করছেন অনায়াসে।
একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, খোলা বাজারের আইসক্রিমে যেসব রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়, সোজা কথা একজন মানুষের শরীরের সব সিস্টেমের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বড়দের চেয়ে বেশি ক্ষতি করে শিশুদের দেহে। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহে প্রবেশ করে প্রথমে কিডনিতে প্রভাব ফেলে। যে কারণে ক্রমশ; কিডনি কার্যকারিতা হারায়। তাছাড়া নিম্নমানের আইসক্রিমে ক্যানসারের উপাদান থাকে। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে আইসক্রিম খেলে একজন শিশু ক্যানসারেৎ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার থাকে।
তাই প্রত্যেকটি সন্তানের অভিভাবকের উচিত বাহিরের খাবার থেকে সন্তানদের বিরত রাখা। তাছাড়া এইসব খাবারের ফলে আদরের সন্তান উপরোক্ত যেকোনো একটি রোগে আক্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এখন বাজারে বিভিন্ন রসালো ফলের সমাহার দেখা যায়। সেক্ষেত্রে বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খোলা আইসক্রিম না খাইয়ে তার পরিবর্তে বাজারের এসব টাটকা রসালো ফল কিনে ব্লেন্ড করে সুস্বাদু জুস অথবা আইসক্রিম তৈরি করে খাওয়াতে পারেন। এসব ঘরোয়া খাদ্য স্বাদের দিক থেকে যতটা সুস্বাদু, শরীরের জন্যও ততটা স্বাস্থ্যকর।
তবে কিছু সচেতন অভিভাবক এবিষয়ে মত প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংস্থার উচিত এবিষয়ে স্কুল পর্যায়ে মনিটরিং করে এবং সেইসাথে বিশেষ করে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের দোকানগুলোতে সর্বদা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করলেই এর ব্যবহার অনেকটা কমে যাবে। এছাড়াও স্কুলে এইসব মরণঘাতী খাদ্য শরীরে কি কি ক্ষতি করে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই সংস্থার উচিত জনস্বার্থে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা এবং মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
আলীম